আমার কক্সবাজার ভ্রমন নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই, পোস্ট টা হয়তো অনেক বড় হবে তাই আগেই বলে রাখছি যাদের পড়ার ইচ্ছা পড়বেন না হয় পড়বেন না । :)
অনেকদিন যাবত ধরে আমি কোথাও যাই না, খুব বেশী একঘেয়ামি টাইপ হয়ে গিয়েছিলাম।লাস্ট ২০১২ সালে কক্সবাজার গিয়েছিলাম তার আগে সিলেট এর পড় থেকে ইউনি লাইফ নিয়ে বিজি হয়ে যাই আর কোথাও যেতে পারিনি। ইউনি তে ওঠার পড় বুঝতে পারি এখানে আমার নতুন করে পথ চলতে হবে। পুড়নো সেই বন্ধু-বান্ধব,সঙ্গি-সাথি কেওই নেই। যাইহোক, ব্যাপারটা এতো সহজ না,নিজেকে ইউনি এর সাথে মেলাতে মেলাতেই ৫-৬ সেমিস্টার চলে যায়।এর ভেতর বেশ কিছু সহপাঠি আমার বেশ কাছের হয়ে পড়ে যেমন: নীরব, হাকিম, বিদ্যা সহ আরো অনেকে। একজন বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়ে যাই, আসলে ভাই ইম্রান।ইম্রান এর সাথে আমার প্রথম বন্ধুত্তের কারন ছিলো আমি ইম্রির মাঝে নতুন কিছু পেয়ে ছিলাম, একটু ঘাওরামি টাইপ বলা যায় ;) :3 (চেতিস না রে,আদর কইরা বললাম)
যাইহোক ঐ কথায় না গেলাম,আমি আর ইম্রি মিলে ঠিক করেছিলাম ২য় সেমিস্টারে আমরা ইউনি বন্ধুরা মিলে একটা Tour দিবো । সেটা কক্স হতে পারে,সিলেট হতে পারে বা কুয়াকাটা হতে পারে। কিন্তু সে আর হলো? দেখতে দেখতে আমরা ৯ম সেমিস্টার পর্যন্ত চলে আসি কিন্তু সে ভ্রমন আর হয় না।শেষমেষ ইম্রান আশা ছেড়ে দিলো এবং বলে উঠলো 'আমি একাই যামু'
চিন্তা করলাম নাহ, এখন একটা হেনস্তা-ফেনস্থা করতে হয়। ওদিকে হাকিম কয়েকদিন পড় পড় বলে উঠে 'কি রে বন্ধু আমরা কি কোথাও যাবো না, ইউনি লাইফ তো শেষের দিকে চলে আসলো।'
মহা বিপদ তো, আসলেই তো শেষের দিকে চলে আসলাম, অতঃপর আমি আর ইম্রি মিলে একটু সিরিয়াসলি বসলাম, ডাকা হলো নীরব ভাইকে। সে বলে উঠলো 'এতো কিছু জানিনা, যাইতে ইচ্ছা করতেছে তো যাইবাম,কে কে যাইবা হাত তুলো। মিডি তুই ব্যাবস্থা কর,আমরা যাইতেছি' অনেক ঠেলা শেষে আমরা ৬ জন হলাম, Hossain Imran, Nirob Ahmed, Rathul Islam, Bidda Charan, Sms Bond (সানি আমাদের ইউনির না) এবং আমি !
চলে গেলাম কক্সবাজার, ঘুরে এলাম। ভবঘুরে হয়ে আমরা ৬ জন মানুষ, ৬ দিনের মতো থেকে এলাম।কাছ থেকে সবাই সবাইকে দেখলাম,বুঝলাম বন্ধুত্ত সহপাঠি থেকে ভাইয়ে চলে গেলো সম্পর্ক গুলো। কি, বোঝা গেলো কিছু? Bonding এমনি এমনি হয় না তার জন্য প্রয়োজন হয় effort. কিছু অনুভুতি এর আদান প্রদান আর বোঝাপড়া তারপর একজনের উপর আরকেজন এর care। এগুলো থেকেই বন্ধুত্ত শুরু হয় এবং তা গাড় হতে থাকে।
শুরু টা ছিলো নীরবের বাসা থেকে,নীরব সবাইকে সেদিন মুরগি আর ভাত রান্না করে খাওয়াইছে :D তারপর সেখান থেকে কমলাপুর প্লাটফর্ম ৩ এ ট্রেন এর জন্য রাত ৩ টা অবধি অপেক্ষা। আমাদের চিল্লাপাল্লা,হেড়ে গলায় গান গাওয়া!এক আপুর সাথে সবাই মিলে indivisually FLIRT করা :p
তারপর ট্রেন আসা এবং কি চিৎকার আমাদের! ট্রেন এর মামা আমাকে বলতেছিলো তাড়াতাড়ি উঠেন, রাইখা চলে যাবো কিন্তু ;) হাহাহাহা...ট্রেন এর ভেতর কি ফীল একেকজনের, বিদ্যা আর সানি এর সে জগত বিক্ষাত ঘুম। পৌঁছে গেলাম চট্টগ্রাম এবং সেলফি হাকিমের আইফোনে ইস্টিশন সেলফি তোলা,আহা !
চট্টগ্রাম থেকে কক্স এর বাস ধরার সময় নীরব ভাই আর ইম্রান ভাই এর সেই পার্ট এর কথা ভোলা অসম্ভব!
'মামা ৬ জন আছি, ১০০০ টাকা দিমু যাইবা?নাহলে ফুটো এখানে আয়া চিল্লাইয়ো না,আমাগো যেডা তে খুশি আমরা যামু' লল !!
তারপর? কক্সবাজার :D স্পস্ট মনে আছে কলাতলি তে যখন গাড়ি থেকে আমরা প্রথম সমুদ্র দেখি! ইস কি শান্তি টাই না লাগতেছিলো! টানা ১৯ ঘন্টার Journey এর পড় Finally আমরা কক্সবাজার সমুদ্রের শহড়ে।
তারপর হোটেল রুম নিয়ে আমাদের সেই মুহূর্ত এবং অভিনয়, হোটেল এর রুম চরম পছন্দ হবার পরেও আমার আর নীরব এর কি ভাব :p ইম্রান তো পারলে না, এইখানে আমরা থাকবো না, লল! অথচ রূমে ঢুকে প্রথম চিল্লানি ইম্রি দিয়েছিলো । রাতে বিচ পারে যেয়ে আমাদের লাফঝাপ! সবাই যেনো একসাথে বাচ্চা হয়ে গেলাম। শুরু হলো আমাদের একেকজনের ভেতরকার বাচ্চা টা বের হয়ে আসা । মুহূর্ত গুলো সত্যি ভোলার নয়।
তারপর শুরু হলো আমাদের ভ্রমন, একেক করে হিমছড়ি,ইনানী । জীপে কি লাপঝাপ চিল্লানি আর গান সাথে সেলফি হাকিমের সেলফি তো আছেই, আবার বিদ্যা'র মোবাইলে কথা কওয়ার প্যাঁড়া!একটা আরেকটারে গাইলানো মন মতো , কি যে অবস্থা।হিমছড়ি তে ঝরনা দেখিয়া সবার মুখবয়ব ছিলো 'ইহা কি ঝর্না!?এর চেয়ে আমি মু*** বেশী পানি বের হবে' :p :p হাহাহাহা ! তারপর পাহাড়ের উপরে সে চাচার টক আম ভর্তা! আহা !
ইনানি তে যেয়ে আমার আর নীরবের সেই মোটর রাইড, তারপর ৬ জন মিলে রেস দেয়া।তারপর মোটার গাড়ি থামিয়ে ইম্রির লাল কাঁকড়ার অভিযান ছবি তোলার জন্য। কি যে সিনপাট! সানি'র একটা ছবি তোলার জন্য আমার ১ ঘন্টার পরিশ্রম! মনে থাকবে। ফেরার পথে আমাদের হেরে গলায় গান,সন্ধ্যে নেমে আসা এবং হোটেলে ফিরে জ্যোৎস্না রাতে সমুদ্র দেখার জন্য বের হওয়া।
জ্যোৎস্নায় সমুদ্র দেখার মুহূর্তে আমার পাশে ছিলো নীরব। লল ! একটা কথা না বললেই নয়ঃ
নীরবঃ আহ শান্তি, জ্যোৎস্নায় সমুদ্র দেখার কি শান্তি। আর কেও প্যাড়াও দিতেছে না।কি মজা তাইনা দোস্ত?
আমিঃ দেখ, আগে এক মিনিট দেখ । প্যাঁড়া খাস নাকি দেখ।
তারপর আর না বলি :3 :p সে এক ইতিহাস ;)
পরদিন রামু তে যাওয়া, বৌদ্ধ মন্দিরে যেয়ে পায়ের নীচে ঠুস্কা ফালানো,
এরপর সে দূর পাহারে কোন এক স্বর্ণের মন্দিরের মতো দেখে সেখানেই যাওয়া।Discover করে একটা adventurious পাহাড়ের উপর উঠে যাওয়া। সবচেয়ে বেশী মজা আমরা এদিন টা তেই করেছিলাম। সানি'র সাথে আমার সেই পাহাড়ের নীচে সব কথাবার্তা।একলগে দুই বন্ধুর আবেগি হয়ে যাওয়া ভোলার না।তারপর পাহাড় জয় করে আমাদের জগত বিক্ষাত সেলফি তোলা :D ফিরে আসার সময়ে টেম্পু তে "টিকাটুলির মোড়ে" গানের সাথে সে কি নাচ আর চিল্লানী সব গুলার রে বাবা! #PRICELESS
মহেশখালী পুরোটাই আমার জন্য একটা Thrilling Journey, মোহনার উপর দিয়ে Speed Board দিয়ে যাওয়া আমার মতো সাঁতার না জানা মানুষের জন্য আসলেই ভয়ংকর।মহেশখালী তে সব চেয়ে মজা পেয়েছিলাম শিব মন্দিরে। সাওতাল মেয়েগুলা একটু বেশী সুন্দর ;) আমি ভাবতেছিলাম ঐখানে বিয়ে করে সংসার বাঁধলে কতো সুখে থাকা যায়,তাইনা? কি দরকার ঢাকার মতো আওলা-ঝাওলা শহড়ে এতো কস্ট করে থাকার? ইম্রি তো জিজ্ঞেসী করে বসলো একজন কে 'আপু, আপনারা কোন গোত্রের' (বেশী ভদ্র পোলা,সবাইরে কথা শুরু করার আগেই আপু ডাইকা বসে -_- :3 ) তারপর ফেরার পালা, ফেরার পথে যেখানে ভরপুর পানি ছিলো সেখানে দেখি শুকিয়ে গেছে,আমি বুঝিই নাই এখান দিয়েই আমি গিয়েছি পড়ে যখন বলা হলো জোয়ার এর সময় আসছি আর ভাটার সময় ফিরছি তখন বুঝলাম। তবে Speed Board এ ফেরার সময়ে সব গুলা যে ভয় পাইছিলো। একেবারে :p
কক্সে ফিরে এসে শুরু হলো ঢাকা ফেরার চিন্তা,নীরব আর আমি আসবো না যোগ দিলো ইম্রান আর সানি তারপর বিদ্যা আর হাকিম চট্টগ্রাম চলে যাবে বলে জানালো। কিন্তু আমরা কক্স এ আরো একদিন থাকবো কারন আমাদের সমুদ্র দেখা মন মতো হয়নি।কক্স এ একদিনে যা দেখলাম পোলাপাইন সমুদ্র আর কি দেখে মার্কেট করেই কুল পায়না। এক আমি অভাগা যে একাই সমুদ্র পারে শুযে শুয়ে সমুদ্র দেখলাম। মার্কেট এর প্রশংগ আর না টানলাম তবে মার্কেট নিয়ে আমি ইম্রান ভাইকে নতুন করে চিনতে পারছি :3 (মাইয়ারাও এতো শপিং করে নারে আর এতো প্যাঁড়া নেয় না রে! নীরব ভাইয়ে তুমিও কম যাও না :/ )
মার্কেট এর একটা ঘটনা বলি, বিদ্যা শঙ্খ কিনবে তা আমাকে বললো 'চল দোস্ত আমাকে হেল্প করবি।' গেলাম তার সাথে,শঙ্খের দোকানে তিন-চার টা মেয়ে দাড়িয়ে শঙ্খ দেখছে দোকানদার শঙ্খ এ ফু দিয়ে বাজিয়ে দেখাচ্ছে।মেয়েগুলো আবার সে শঙ্খ নিজেরা বাজাতে যেয়ে পারছে না কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ করছে।আমাদের বিদ্যা ভাই যায়া নায়কের মতো শঙ্খ টা নিলো এবং বাজাতে যেয়ে খালি ফু দিয়ে পু পু করলো আর আশেপাশে থেকে সব হাসা-হাসি শুরু করলো। মানে ইজ্জত এর ফালুদা কারে বলে ! -_-
এরপর গালি একটাও মাটিতে পড়লো না... বিদ্যা রে !!
ফিরে আসার বেলা ঘনিয়ে আসলো, ফেরার পথে হানিফ বাসে ফিরে আসা। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছিলো না পিসি তে বসে কোনো রেসিং গেম খেলছিলো তা নিয়ে এখনো আমাদের সংশয় আছে।সবগুলা ঘুম বাদ দিয়ে দুই চোখ বড় বড় করে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
যাইহোক, ফেরার পথে সত্যি খুব খারাপ লাগছিলো যখন কক্স ছাড়ছিলাম। নীরব তো বলেই উঠলো 'আমি যাইতাম না প্লিজ,কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা রেখে যাচ্ছি'
হ্যাঁ, রেখে তো এসেছি। আমাদের সুন্দর কাটানো কিছু মুহূর্ত ,আমাদের এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধুর বন্ধুত্ত গাড় হবার ক্ষন কিন্তু সাথে নিয়ে এসেছি স্মৃতি। আমরা একসাথে এভাবে আবার কবে হতে পারবো জানিনা কিন্তু সেখানে কাটানো সময় গুলো সত্যি কখনো ভুলবো না। কে কিভাবে মনে রাখবে কি রাখবেনা জানিনা কিন্তু আমার অনুভুতি গুলো আমি বলে শেষ করলাম। দুঃখিত অনেক বড় পোস্ট দেয়ার জন্য কিন্তু অল্প কথায় কিছু অনুভুতি আসলে শেষ করা যায় না, হয় না।
আমাদের এই Tour এ অনেক ভুল ছিলো, প্যাঁড়া ছিলো, ঝামেলা ছিলো এমন কি মন মালিন্য ছিলো আবার অনেক তিক্ততা ছিলো বা আছে । আমার উপরেও অনেকের ক্ষোব বা রাগ আছে বা ছিলো বা থাকবে, আমারো আছে বা ছিলো কিন্তু সর্বোপরি আমি বলবো কোন কিছুর ভালো ও মন্দ দুটো দিক থাকাটা জরুরী না হলে তা জমে না। আমাদের Trip জমেছে কারন এখনো আমাদের একজনের আরেকজন এর উপর Expectetion আছে। চাওয়া-পাওয়া আছে,একটা Bonding সবার মাঝে তৈরি হয়ে গেছে চাইলে সেটাকে তোমরা সামনে নিয়ে যেতে পারো কিংবা ভেঙ্গে ফেলতে পারো তবে আমার উপর রাগ রেখো না কেও, হয়তো অনেক রাগারাগি বা গালাগালি করেছি কারন হয়তো আমি একটু বেশী আবেগি মানুষ তবে আবেগটাও জরুরী।
কক্স এর সমুদ্র সমান ভালবাসা সবার জন্য এবং মুহূর্ত গুলো আমাকে দেয়ার জন্য হৃদয় থেকে বলছি ভালবাসি।
আমি এখানেই ইতি টানছি, কক্স নিয়ে আমার পোস্ট নিয়ে তোমরা যারা ক্লান্ত তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী, আবার আসবো হয়তো তবে এই ট্যুর নিয়ে এখানেই শেষ করছি। আর সানি তুই আমাদের ইউনি মেট না, এতোদিন ছিলি ইম্রির বন্ধু কিন্তু দেখ এই ট্যুর তোকে আমাদের বন্ধু বানিয়ে দিলো আমদের তোর বন্ধু বানিয়ে দিলো এবং ইউনি তে না থেকেও তুই এখন আমাদের অংশ :)
এটাই হয়, এমনটাই হতে হয়, এবং এমনটাই হবে এই ছয় জনের ক্ষেত্রে, আস্তালা-ভিস্তা !
-অবয়ব সিদ্দিকী মিডি
সাগরের পারে, পাহাড়ের দেশে (১৬ই মে ২০১৫ )