সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬

কথোপকথন-০৪

- তোমাকে একবার ছুঁয়ে দেখি?
- কতোটা গভীর ভাবে ছোঁবে?
- যতোটা গভীর ভাবে তুমি চাও?
- পারবে?
- কথা নিয়ে খেলতে ভালবাসো? 
- কথা না শব্দ?
- পার্থক্য কি খুব বেশী?
- শব্দমালা মিলে কথা আর একেকটা শব্দ মানে আলাদা আলাদা অর্থ।
- গল্প?
- আছে?
- শুনবে?
- শোনালে গল্পে ডুবে যাবো?
- সেটা যে শুনছে তার উপর নির্ভর করে।
- কি ভাবে?
- প্রলয়ে
- ঝড় হবে না?
- না
- বৃষ্টি, টর্নেডো কিংবা হ্যারিকেন?
- সব কিছুকে শোষন করে কে?
- প্রলয়?
- প্রলয়
- সে তো ধ্বংস যজ্ঞ চালায়
- তা না হলে গভীর ভাবে ছোঁব কি করে?
- ভালবেসে?
- সে তো ইম্পালস এর খেলা
- তুমি তাহলে কি করো?
- ক্ষত করি, গভীর থেকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেই।

শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬

কাল্পনিক

-তোমার কাছে টাকা আছে?
-কিসের টাকা?
-এই ধরো ৫ হাজার? 
-হ্যাঁ আছে। 
-আমার কাছেও ৫ হাজার আছে, চলো হানিমুনে যাই!
-কি!!!??
-এভাবে চিল্লায়া উঠলা কেন? বলছি চলো হানিমুনে যাই।
-বিয়া হয় নাই কিছুনা, তোমারে দেখলামো না কোনদিন, বাস্তব না মিথ্যা এক কাল্পনিক চরিত্র তারে নিয়ে হানিমুন?
-ধুর, তুমি খালি ফাও বকো। যাবা নাকি বলো?
-হানিমুনে এতো কম টাকা দিয়ে হয়না।
-আরে হয় হয়।
-আর হানিমুনে তুমি টাকা দিবা কেন?
-আরে, হানিমুন কি তোমার একার নাকি? মেয়ে-ছেলে সমান।
-ওহ, এখন ছেলে-মেয়ে সমান থেকে মেয়ে-ছেলে সমান হয়ে গেছে?
-তুমি বড্ড বাজে বকতেছ কিন্তু, যাবা নাকি বলো?
-প্লান টা কি বলেন, শুনি?
-বাসে যাবো আসবো ১৬০০ টাকা।
-কই যাবা?
-আরে কক্সবাজার যাবো। সাগর ছাড়া হানিমুন হয় নাকি বোকা ছেলে।
-আচ্ছা,তারপর?
-সেখানে হোটেলে দুই রুম নিবো। এক রুমে তুমি আরেক রুমে আমি। দুই রুম তিন হাজার টাকা।
-ওয়েট ওয়েট... ওয়েট! দুই রুম কেন? আমরা না হানিমুনে যাচ্ছি?
-হ্যাঁ, হানিমুন তো শুধু সাগর পারে সূর্য ডোবার সময় তোমার কাঁধে মাথা রেখে আমার চুল ছেড়ে দিয়ে দারিয়ে থাকা। তোমার দুই বাহুর মধ্যে আমার হাত থাকবে আর কাঁধে আমার মাথা থাকবে। তারপর সন্ধ্যা হবে আমরা সাগর পারে হাটবো দু'জন। এইতো।
-ব্যাস? এইই?
-হ্যাঁ! :/
-এ জন্য এতোকিছু।
-হ্যাঁ, এখন ব্যাগ গুছাও, সকালে বের হবো। আমি কিছু জানিনা সব তোমার দায়িত্ব।
-হ, এখন তো সব আমার দায়িত্ব। ছেলে-মেয়ে সমান না কি বলতেছিলা?
-কথা বাড়ায়ো না তো। যাও ব্যাগ নিয়ে আসো, গুছিয়া দেই। আমার অনেক কাজ আছে।
-আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-না, কোনো কথা না। আমি জানি তুমি সব দুস্ট দুস্ট কথা বলবা।
-আরে না, একটা কথা বলবো জাস্ট।
-একদমই না।
-ধুর, তুমি একটুও বুঝো না।
-হ্যাঁ, তাই সই।
-আচ্ছা, তাই সই।

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬

স্বপ্ন পরীর কাছে লিখা খোলা চিঠি-৩

স্বপ্নপরী,
অনেকদিন হয় তোমায় লিখিনা, অনেকদিন মানে অনেক দিন। ভেবেছিলাম আর লিখবোও না। কিন্তু আজ বড্ড লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। অভিমান করে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারছিনা। ঠিক কতোদিন পর এভাবে তোমায় লিখছি তা আমার মনে নেই, কি লাভ বলো এসব আবেগের দুনিয়াতে বসবাস করে? যে মানুষটির কোনো অস্তিত্ব নেই তাকে নিজের মাঝে লালন-পালন করে এভাবে এসব লিখালিখিকে কেও পাগলের প্রলাপ বলে অপমান করলেও যে আমার কোনো উত্তর নেই দেবার। কিন্তু প্রতিটি মানুষের রিলিফের কিছু জায়গা থাকা উচিত যেখানে সে পুরোটাই নিজেকে খুজে পাবে, স্বাধীন এক মানুষ হিসেবে নিজের সত্ত্বাকে আকাশে মেলে ধরে উড়ে বেড়াতে পারবে। আমার জন্য জায়গাটা আসলে কাল্পনিক তুমি।
কেমন আছো তুমি? এতোদিনে বোধয় আমার উপরেও তোমার খুব উল্টো অভিমান জন্ম নিয়েছে তাইনা? হয়তো ভাবছো একটা মানুষ কিভাবে বেলুম তোমার অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে? আবার তোমায় চিঠি না লিখে এতোদিন থেকে গেলো, মনমতলবি লিখতে ইচ্ছে করলো আর এসে হাজির হলো, তাইনা? মনে করতেই পারো, তাতে আমার কোনো বাধা নেই। আমি বাধা দেয়ার দলের লোক নই। আজ আমি যেখান থেকে তোমায় চিঠি লিখছি তা বর্ণনা করতে গেলে বলতে হবে স্বর্গপার ! কিভাবে? বিশাল এক আকাশের নিচে কোনো এক মহা সাগরে ভাসমান ট্রলারে হারিকেনের আলোতে বসে বসে তোমায় লিখছি। ভাবতে পারো আমি এখানে এলুম কি করে? যার কল্পনার জগত নিয়ে এতো নাড়াচাড়া তাঁর জন্য এ কোনো অসম্ভব কিছু বলোতো? বাহিরে অনেক্ষন খুব বৃষ্টি হচ্ছে, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বিকট শব্দে। এটাকে আমি স্বর্গপার বললাম বলে তুমি একটু অবাক হচ্ছো,তাইনা? আমার জন্য ইহাই স্বর্গ এখন। ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য! মানুষ জাতি দমকা হাওয়ার মতো শুন্যতা পছন্দ করেনা তাই যখন যেখানে থাকে তাহাকেই তারা স্বর্গ বানিয়ে নেয় অথচ শুন্যতা তে ভড় করেই তাদের বসবাস। যেমন আমিও তুমিহীন এক শুন্যতায় ভড় করে কালের পর কাল পার করে যাচ্ছি। এখন এ শুন্যতা আমার এক দুঃখ বিলাসী অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাহ, এর নাম আমি দিলাম শুন্য বিলাসী। আমার জন্য গভীর রাতে এমন পরিবেশকেই স্বর্গ মনে হচ্ছে। এমন সময় তোমায় লিখার একটা কারন আছে, তুমি অনেকবার বারণ করেছো তবুও বলছি। পরী, আমার বয়স হয়েছে। অনেক দায়িত্ব- কর্তব্য নামক চাবুক আমার ঘাড়ে এসে পড়ছে। স্বপ্ন জগত বলো আর নিজের দেখা স্বপ্ন বলো সেখানে আমি আর বিচরন করিনা। গান-বাজনা করিনা, ওসব ফিল্ম-টিল্ম নিয়েও আর পড়ে থাকা সম্ভব হয়নি। তাই স্বপ্ন বা কল্প জগতে আমি অনেক আগেই মরে গেছি, সময় হয়েছে তোমায় জানিয়ে দেবার এই মহাসাগরে আমার তরীও হয়তো আজ ডুবে যেতে পারে। বরং সেটাই খুব স্বাভাবিক হবে, আমি বেচে গেলে সেটাই অস্বাভাবিক হবে। ট্রলার খানা কে আমার কিছু খুব কাছের মানুষ যারা অনেক্ষন ধরে এ মহাসাগরে বেয়ে আমায় নিয়ে যাচ্ছিলো তারা অনেক্ষন ধরে নিয়ন্ত্রনে রাখার চেস্টা করছে হয়তো তারাও একটা সময় আশা ছেড়ে দিবে আর তখনি হয়তো তা ডুবে যাবে। আর তুমি তো জানই আমি সাতার জানিনা। আচ্ছা, এসব কথা থাক। তোমায় বরং আমার কিছু আপডেট জানাই।
তোমার নরক বালক এখন গান করেনা, গল্প লেখেনা বা সে সব গল্পের স্ক্রিপ্ট সাজিয়ে ফিল্ম বানাতেও যায়না। হাতের কাছের যে ছোট ভাই ছিলো সেও অনেক দূরে চলে গেছে, আবার অন্যভাবে বললে সরিয়ে দিয়েছি। কেওই আর নেই সেভাবে, হাতে গোনা দু-একজন যা আছে তারা বা তাদের কতোটা কাছের আমি তা নিয়ে আমি সন্দিহান অনেক, সে অর্থে আমি খুব একা একজন মানুষ এখন। এ আর নতুন কি বলো? যার সুখ-দুখ তো দূরের কথা সিম্পল একটা কথা শেয়ার করার কোনো বান্দা-বান্দি নাই সে তো একাই তাঁর থেকে একা আর হতভাগা আর কে বলো? এখন আর কাওরো কথাও শুনি না, সেটাই ঝামেলার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের সুখদুঃখের ভ্যান-ভ্যানানি কে যেদিন থেকে "না" করেছি সেদিন থেকেই আমি আচানক ভাবে চেঞ্জ হয়ে গিয়েছি। খুব সুন্দর করে এখন না বলতে শিখে গেছি জানো? তবে তবুও ভালো আছি, ভালো থাকা শিখে গেছি বলতে পারো। জানো, জিমে জয়েন করেছি? এইতো ৩ মাস তিন সপ্তাহ চলছে, ১১ কেজি ডাওন, হাহ... কি ভাবছিলা? তোমার মোটু মোটুই থাকবে? সেদিন আর থাকবেনা। কিউট পান্ডা, বা পু বা যাই বলো ওসবের দিন শেষ। দেখবা আমি খুব শিগ্রি আগের আদনান সামি থেকে বর্তমান আদনান সামি হয়ে গেছি। মাস্টার্স এর ক্লাস হয় দু'দিন, দুইদিনে আমার গাধার মতো খাটনি যায়। অনার্সে বেশ ভালো করেছি। তোমার ইচ্ছে পূরণ করেছি সাথে বাবা-মাকেও খুশি করেছি। ও! তোমাকে তো বলা হয়নি আমি বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। মানে কোচিং করছি, দোয়া করো। একটা জব-টব এরও খুব চেস্টা চলছে। এইতো, এসবের মধ্যেই আছি। জানো আমিনা খুব চুপচাপ আর অমায়িক ধৈর্যশীল মানুষ হয়ে গেছি। আমার কেন যেন কিছুতেই কিছু হয়না, না রাগ না কোনো অনুভুতি। মাঝে মাঝে ভয় হয়, কিসের তা জানিনা। আমার ধারনা তুমি খুব বুঝে গিয়েছো যা তোমার বোঝার দরকার ছিলো,তাইনা? আমায় একবার এসে বুঝিয়ে যেয়ো প্লিজ। এভাবে লিখতে থাকলে লিখতেই থাকবো। তোমায় লিখতে গেলে আমার হাত থামতে চায়না, চাইবেওনা তবুও থামতে হবে,থামতে হয়। খুব ঘুম আসছে। না পীল খাইনি, এমনি খুব টায়ার্ড লাগছে। কস্ট হচ্ছে... থামতে হবে।
শোনো,
ঐ আকাশে ঝাপসা তারাটি সাক্ষী হয়ে আছে, প্রতিটি মুহূর্ত আর একাকিত্তের হিসেব আমার কাছে নেই কিন্তু ঐ তারার কাছে আছে, কখনো জানার ইচ্ছে হলে ডিপোজিট ভেঙ্গে সব হিসেব-কিতেব কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নিও। ওয়াদা করছি একটুও কমতি পাবেনা সেখানে তোমায় ভালবাসার আর দিনেক রাতেক তোমায় জঘন্ন ভাবে মিস করার। আফসোস পুরোটাই কল্পনাতেই রেখে দিতে হলো, শুধু তোমাকেই পাওয়া হলো না। এক তুমি কল্পনা ভেঙ্গে আসলেই না,আর এখন তো... আচ্ছা বাদ দেই। চার দেয়ালের বন্ধী হয়ে থাকা মানুষ কে সে দেয়াল ভেঙ্গে বের করা খুব কঠিন কাজ পরী, আমি জানিনা সে কাজ তোমার দারা সম্ভব হবে কিনা। আমি সে অপেক্ষাতেও নেই তবু দেয়ালে বন্ধী থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে চোখ মিলে তাকালে তাকাতে ইচ্ছে করে, চোখ মিলে পরাণ ভরে খুব আকাশ দেখতে ইচ্ছে করে, তোমার চুলের খোপায়, কানের দুলে, ঠোটের নিচে, গালেড় টোলে আর কাজলা চোখের নেশায় ধরা দিতে ইচ্ছে করে। নিজ হাতে আলতা রাঙ্গা এক পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে। হাতে হাত রেখে সব দেয়াল ভেঙ্গে বের হয়ে যেতে ইচ্ছে করে, তমার শাড়ীর আচলে, কোমড়ের বিছায় আর কোলে মাথা রেখে খুব ঘুমুতে ইচ্ছে করে। পারবে আমাকে এ দেয়াল ভেঙ্গে বের করতে? হাহাহা, আবার কল্প করলাম। জানি সত্য নয়, শুধু কল্পনায়, স্বপ্নের ঘুড়ি, আমরাই উড়াই।
সাগরের ঢেও খুব উত্তাল হয়ে উঠেছে, বাস্তবতার থাবাটাও বেশ লেগেছে, বেচে থাকলে আবার লিখবো। ভালো থেকো পরী। ডুব সাগরে ডুবলে তরী মাঝি খুজে পাওয়া দায় তবু তোমার লাগি ওগো পাষাণ করি এ মিনতি। পারলে মোরে তরী খুঁজে উঠাইয়ো তোমার ঘাটে, ভালবেসে আচল বিছায়ে পান্তা দিলেও খাবো মন ভড়ে, আপন করবো তোমায় নিজেরে বিলায়া দিয়ে।
-নরকবালক
একটা কবিতা লিখেছিলাম বছর এক আগে, দিয়ে গেলাম।
মেঘকন্যা
মেঘ ঘুর ঘুর ডাকছে বৃষ্টি কোথায় সাজছে? মেঘলা মেয়ে,মেঘলা বরণ কেশে তাহার মন হরণ
বৃষ্টি কাহন জবা কানন বৃষ্টি আজ আসবে তাই তো বাতাস বইছে কল্প যে সে আঁকছে
না বলা কেচ্ছা দেখো কতো বলছে বৃষ্টি বরণ? জবা কানন? মেঘ বিলাসী? মন উদাসী? বৃষ্টি কন্যা?
না না, মেঘপরী ঐ যে দেখো বৃষ্টি নামছে! উদাসী চোখে ঘোলাটে মনে নয়ন তারায় বৃষ্টি কন্যা কি যেনো ভাবছে
হ্যাঁ হ্যাঁ, বৃষ্টি দেখো আসছে বৃষ্টি বেলায় কন্যা আনমনা তবু সে তো বৃষ্টি পানে চাইছে ।
বৃষ্টি দেখো আসছে, মেঘপরীর দেশে,সে নয়নে মেঘলা বেশে সে যে নামবে । মেঘলা কন্যা, মেঘলা বেশে
বৃষ্টি বিলাশে আজ সাজবে তাহারে আজি সে যে বাঁধবে । স্বপ্ন পরীর কাছে লিখা খোলা চিঠি-৩ অবয়ব সিদ্দিকী মিডিয়া অক্টোবার ১১,২০১৬

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

কাল্পনিক

-তুমি এতো দূরে কেন?
-কই?আমি তো তোমার কাছেই বসে আছি।
-না তো। তুমি অনেক দূরে।
-এখনো দূরে মনে হচ্ছে? যাও আরো কাছে আসলাম।
-হুম, এখনো অনেক দূরে।
-আরো কাছে আসলে তো আমার নি:শ্বাস এর শব্দ শুনতে পাবে।
-সেটাই শুনতে চাচ্ছি।
-ভয় হয়।
-কিসে?
-এতো কাছে আসতে।
-সে তো আমার পাবার কথা।
-কেন?
-ছেড়ে চলে যাবে বলে।
-এতো সিউর হয়ে কিভাবে বলছো যে চলেই যাবো?
-কারন আমি জানি যে তাই।
-কি জানো?
-এই যে ছেড়ে চলে যাবে।
-তোমার কাল কি হয়েছিলো?
-কই কিছু না তো।
-ফোন দিচ্ছিলাম বার বার, ধরলে না যে?
-ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।
-তুমি? এতো তারাতারি?
-হুম, স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম
-কেন এমন করো?
-তো কি করতাম?
-সবাই তোমাকে উইশ করার জন্য ফোন দিয়েছে আর তুমি এভাবে অভিমান করে অকাজ কেন করলা?
-তাতে কারো কোনো অভিযোগ আছে বলো?
-এই যে আমি এখন করছি, এটা কি অভিযোগ না?
-না।
-হ্যা, এটাই অভিযোগ।
-তুমি অভিযোগ করতে পারো না।
-কেন?
-কারন তার আগে যে আমার অভিমান ভাঙাতে হবে তোমার।
-পাহাড় সমান এত্তো বড় বড় অভিমান হাজারো কি করে ভাঙাই বলো?
-হাসালে।
-হাসো না, তোমাকে হাসতে দেখতে খুব ভালো লাগে। খুব শান্তি শান্তি লাগে।
-পারবো না।
-তোমার আজ জন্মদিন গেলো। এই অভিমান নিয়ে কেন সারাটাদিন গাল ফুলিয়ে ছিলে বলবে?
-মেঘলা আকাশ মেঘলা কালো চুল, কালোর ভেতর সাদা ক্যানভাস মোর আকি ইরলবিরল ফুল!
-থামো তো, ধাধা করো না। উত্তর দাও।
-তুমি নেই বলে।
-আমি নেই?
-না
-আমি কই?
-জানিনা।
-তাহলে কি জানো?
-শুধু জানি, তুমি নেই আবার আছো কিন্তু নেই।
-ঐ জেনেই থাকো তুমি।
-শোনো
-বলো
-একটা কথা বলবো?
-দুইটা বলো প্লিজ।
-তুমি এতো দূরে কেন?
-আমি কাছেই আছি, তোমার দেয়াল ভাঙার সাহস পাচ্ছিনা।
-হাহাহাহা
-হাসছো?
-গড়লে যে দেয়াল ফুরায়ে মায়া, ভাংবে কি তা করিলে আড়াল?
-কিছুই আড়াল করছিনা আমি।
-তুমি নিজেই তো এক আড়ালে বন্ধি।
-আমায় বন্ধি বলছো? না তুমি বন্ধি?
-আমি বন্ধি কাল মুহুরতে জপে খোদা হাহাকার বিলুপ্তি!
-আবার শুরু করেছো।
-আচ্ছা করবো না। আমার ভালো লাগছেনা।
-চলে যাবো?
-আসলে কখন আবার? যা খুশি করো। যাহা আপন মন লাগি তাহাই শুধাই রাত্রিচরী।
-একটা কথা বলবো
-বলো
-শুভ জন্মদিন
:)

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

"মন্তুর রোযা"

ওর নাম মন্তু, মুন্তাসির উদ্দিন কিন্তু সবাই মন্তু বলে ডাকে।
মন্তুর বাবা নেই,মন্তুর বয়স যখন চার তখন তার বাপ কি এক রোগে মারা গিয়েছে। মা আছে তবে আরেকবাপের সাথে চলে গিয়েছে।মন্তু কে মাঝে মাঝে এসে দেখে যায় কিন্তু মন্তু কে কখনো নিয়ে যায় না । মন্তু শহরের চার কোনো ঐ সিগনাল টার পাশে যে বাস গাড়ি গুলো রাতে জমা হয় তার পাশেই এক অস্থায়ী ঘরে থাকে। ঘরটি কয়েকটি কাঠি আর সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে বানানো।
সারাদিন মন্তুর অনেক কাজ,সকাল বেলা বের হয়ে চায়ের দোকানে যেয়ে রহিম বস এর কাছ থেকে চা নিয়ে পাশের হোটেল এবং অফিস পাড়া তে চা দিয়ে আসে তারপর সকালের ডিউটি শেষ হলে রাস্তায় ফুল নিয়ে নেমে যায়।বিকেল পর্যন্ত ফুল বিক্রি করে সে নেমে যায় রাস্তার ফেলে দেয়া বোতল এবং কাগজ গুলো কুড়ে কুড়ে তা বিক্রি করার জন্য কারন সেগুলো থেকে আসা টাকা দিয়ে রাতে তার খেতে হবে।সকালে চায়ের দোকানের রহিম বসের চায়ের ডিউটি থেকে একটা বন রুটি আর চা মেলে আর দুপুরে ফুল বিক্রি করে যা হয় তা দিয়ে কোন মতে দুপুরটাও সে চালিয়ে নেয় তবে মাঝে মাঝে ফুল বিক্রি হয় না তাই দুপুর টাও না খেয়ে পার করতে হয়। মাত্র ৬ বছর বয়স মন্তুর!
গত কাল, ফজল কাকার কাছ থেকে সে শুনেছে আজ থেকে নাকি রোযা শুরু। সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে এবং সন্ধের সময় ইফতার করতে হবে তারপর নাকি রাতের খাওয়া টা ঠিক থাকবে আবার শেষ রাতে যখন ভোরের আযান দেয় তখন খেতে হবে। এভাবে একমাস চলবে। এ সময় টায় নাকি মানুষজন অনেক দান-খয়রাত করে তাই খাওয়া-দাওয়া নিয়ে খুব একটা ঝামেলা হবে না।মন্তু ফজল কাকা কে জিজ্ঞেস করলো 'সত্তি?এই মাসে যার কাছে যাইবো সেই খাওন দিবো?' ফজল কাকা একটু চিন্তা করে বললো 'অন্তত ইফতারের সময় তো দিবোই,আর রেযেকের মালিক আল্লাহ।রোযা রাখবি আল্লাহ দয়া করবো'
মন্তু খুব খুশি হয়ে গেলো,ফজল কাকার কাছ থেকে রোযার সব নিয়ম শুনে নিলো।
আজ রোযা,মন্তু আগ রাতে কিছু না খেয়ে খাবার টা শেষ রাতে খেলো।লেক পারের যেই চাচিটা ইটের মধ্যে বইতে দিয়া খাইতে দেয় সে আজকে কাওয়া বিরানি রাঁধছে। মন্তু কে দেখে চাচি আগের দামেই বিরানি দিলো তাই মন্তু খুব খুশি এবং মন্তু ভাবতে লাগলো রোযা টা সারা বছর থাকলে বোধয় প্রতি রাতে কাওয়া বিরানি খাইতে পারতো ।
সকাল থেকে মন্তু না খাওয়া,সে রোযা রেখেছে।নিয়মিত কাজের সাথে সাথে আজ মন্তু মসজিদে যেয়েও নামাজ পড়ছে।মসজিদে যখন ঢুকছে সবাই ওর দিকে কিভাবে জানি তাকাচ্ছে।তাই যেই কাকায় মসজিদে আজান দেয় সেই কাকা মন্তুরে ১০০ টাকা দিয়া বলছে পরের দিন থেকে যেনো অন্তত একটা পরিষ্কার কাপর পইড়া মসজিদে আসে। সে আনন্দে চোক্ষে দেখতেছে না। সেই টাকা নিয়ে সে চায়ের দোকানের রহিম বস রে বলছে তারে একটা কাপর কিনা দিতে। রহিম বস বলছে কিনা দিবে। সে আরেকবার চিন্তা করলো রোযা টা সারা বছর কেন থাকেনা?
সারাদিন পার হয়ে গেছে, মন্তুর কামাই হইছে মোট ৩০ টাকা। রহিম বস ২০ টাকা আর ফুল বিক্রির ১০ টাকা। কেও বোধয় রোযার মাসে ফুল কেনে না,এমনটাই মনে হলো মন্তুর।৩০ টাকা দিয়ে কি ইফতার করা যাইবো? মন্তু ভাবছে,রাইতের খাওন তো দুই বার। নাহ, সে একবার ঐ শেষ রাইতেই খাইবো । সে মনস্থ করে ফেললো আর ফজল কাকা তো বলছেই ইফতারের সময় এমনেই খাওন পাওয়া যায়। সে আজ অনেক অনেক খাওন দেখছে সকল হোটেল আর বড় বড় দোকানের সামনে সজায়া রাখছে। সে কল্পনা করতে লাগলো,সে পেট ভরে খাচ্ছে... এভাবে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো মন্তু বুঝতে পারে নাই। খুব বেশী ক্ষিদে তে তার পেট ব্যাথা করছে।
ইফতারের সময় হয়ে গেছে, দোকান গুলোতে এতো ভীর যে মন্তু দিশা পাচ্ছিলো না কি করবে,যে দোকানেই যাচ্ছে তাকে ধোমক দিয়ে তারিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিছু দোকানের সামনে দিয়ে তো তাকে হাটতেই দিতেছে না আবার কিছু দোকানের সামনে কেন,দূর থেকেই লাঠি দিয়ে যেভাবে কুকুর তাড়ানো হয় সেভাবে তাকে লাঠি দেখিয়ে হুংকার দেয়া হচ্ছে।
আযান দিয়ে দিলো, ইফতারের সময় হয়ে গেছে। মন্তু রাস্তার মোড়ের খোলা যে দোকান ডা ভীর কম ঐটার কাছে যেয়ে ড্রাম থেকে পানি নিয়ে,পানি খেয়ে রোযা ভাংলো। ৩০ তাকা দিয়া দোকান থেকে ইফতার কিনে সে ইফতার খেতে খেতে হাটা দিলো।একটা বেগুলি,বড়া সাথে মুড়ি মাখাইন্না আর জিলাপি,খাইতে ভালই মজা, রাস্তার পাশে একটা বড় দোকানের সামনে এসে সে দাড়িয়ে গেলোঃ
"খোলা একটা যায়গায় অনেক গুলা টেবিলে অনেক অনেক ভালো খাবার রাখা এবং সেখানে মানুষ গুলো বসে খাওয়া-দাওয়া করছে।কতো খাবার,কতো কিছু! এক টেবিলে মন্তুর চোখ আটকে গেলো, একটা বাচ্চা ছেলে বয়সে মন্তুর সমান হইবো। কিছুই খাইতে চাইতেছে না তার আম্মায় তারে জোড় করে খাওয়াইতে চাইতেছে।শেষ পর্যন্ত খাওন ডা টেবিলের পাশে ঢেল দিয়ে ফালায়া দিলো তারা। মন্তু যেয়ে খাবার টা উঠিয়ে নিলো দেখলো সকালে যে ও বন রুটি খায় ঐটার মতো দেখতে কিন্তু ভিতরে মাংশ দেয়া! আরে বাবা !! গরুর মাংশ মনে হয়!! সে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে খেতে লাগলো। একটু পড় সে তার পাশে তাকিয়ে দেখলো তার মতো অনেক গুলা মন্তু একই কাজ করছে। ওরা একজন আরেকজন এর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো এবং জগৎ জয় করা এক হাসি দিয়ে ইফতার করতে লাগলো ।"
মন্তু ভাবতে লাগলো "ফজল কাকা হাঁচাই কইছিলো ,খাওন পাওয়া যায় রোযার মাসে অন্তত ইফতারের সময় তো পাওয়াই যায়,আর রেযেকের মালিক আল্লাহ। রোযা রাখলে আল্লাহ দয়া করবো' সে মনস্থ করলো সে এক মাস রোযা রাখবেই রাখবে যতই কস্ট হোক আর আল্লাহ'র কাছে দোয়া করতে লাগলো রোযা টা যেনো সারা বছর থাকে।


A Tale Of Love

Would you be my fairy tale,
Could be my love of pale,
In such lonesome night,
On much darkness fight,
Love that can heal this eyes,
Song that can write in the flies.
Hath you ever come to thy life,
Soul thee never meet in the pride,
Hope yet living inside,
One day thee would be my side.
The seven kingdom
or the whole earth,
Even the evil rises again and again,
Thy and I will meet in a tale of love.
In a fiction or imagination
Or in a friction and true attraction,
I will never stop,
Thy will ever in a dot,
Till the last birth,
Breathing until met with the dope,
I would not take anything for granted,
But thy, in me always find the life in a tale of love.

A Tale Of Love
Aboyob Siddiquie Medi


শনিবার, ১৮ জুন, ২০১৬

কথোপকথন-০৩

-এখন গান গাও না?
-না।
-কেন?
-সুর আসে না।
-একজন গাতকের গলায় সুর আসেনা বলছো? 
-না, হৃদয়ে আসে না।
-কেন আসে না?
-জানিনা।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-করো।
-এভাবে নিজের সব কিছু কে মরে দিতে দিলে কিছু বাঁচবে?
-কি বাঁচানোর কথা বলছো?
-তুমিই না বলো, তুমি তোমার স্বপ্নপরীকে খুব ভালবাস?
-হুম
-সে যদি গান গেতে বলে?
-আবার গাবো!
-তখন যদি সুর না ওঠে?
-উঠবে!
-কি ভাবে বলছো সেটা?
-আমি জানি।
-তাই যেন হয়।
-আমি বলবো কিছু?
-হুম, বলো।
-কেও যদি তোমার সত্ত্বা কে খুব যত্ন করে মেড়ে ফেলে তাহলে তুমি কি পারবে কিছু করতে?
-খুনি টা কে?
-সপ্নপরী!
-মানে!!??
-হাহাহাহা...ট্রাজেডি! সবার জীবনেই থাকে।
-হেয়ালি রাখবে? প্লীজ বলো না।
-না, এমনি মজা করছিলাম।
-আমি জানি মজা করছিলেনা, প্লীজ বলো।
-বলার মতো কিছু নেই, আমি গান গাইতে ভুলে যাইনি। শুধু শোনাতে ভুলে গেছি।
-টপিক চেঞ্জ করছো?
-না, সপ্নপরী শুধু মাত্রই একটা কল্পনা। সেই কল্পনাতেই তাঁর জন্ম হয়েছিলো এবং তাঁর হাতে আমার মৃত্যু হয়েছে।
-পাগল হয়ে গেছো তুমি।
-গান শুনবে?
-সত্যি? শোনাবে?
"কার যেন ছবি আঁকি, মনে আমি গোপনে
সে আমায় ধরে রাখে, আড়ালে স্বপনে
যতো ভাবি ভুলে যাবো, আরো বেশী মনে পড়ে
যতো কাছে পেতে চাই, সে তো যায় দূরে সরে,
দুঃখ দেয়াল ভেঙে, স্বপ্ন ছোঁবে আমাকে
ঘুমপরীদের সাথে, ভাসবো সুখের ভেলাতে...।।
প্রতি রাতে স্বপ্নরা আমাকে কাদিয়ে যায়,
দু চোখে জল এসে, আমাকে ভিজিয়ে নেয়,
কেন তবে সৃতিরা আমাকে বেদনায়,
ডুবিয়ে যায় একা পেয়ে, একা আমি কোন অজানায়? "

Aboyob Siddiquie Medi
জুন ০৬, ২০১৬

কথোপোকথন-০২

-সব তোমার দোষ
-কিভাবে?
-তুমি আমাকে, ও সময় ঐ ভাবে ছেড়ে না দিলে আমি এতো কস্ট পেতাম না।
-তো কি করতাম আমি?
-আমি বলেছিলাম, আমরা অন্তত বন্ধু হয়ে থাকি? না তোমার আমাকে ছ্যাকা দিতেই হবে।
-তোমার মেয়েটা দেখতে অনেক মিস্টি হয়েছে, মাশাল্লাহ। আচ্ছা তোমার জামাই তোমাকে ভালবাসে অনেক?
-অনেককক।
-কি, আমার থেকেও বেশী?
-তুমি আমায় ভালবাসলে ওভাবে ছাড়তে পারতে না। তোমার ছ্যাকা পোষাতে আমার আরো দু'বছর সময় লেগেছে জানো?
-দু'বছর, আর তারপর তুমি এখন একজন সুখী পাক্কা বুড়ি।
-আচ্ছা, তোমার কি অবস্থা? জীএফ কে? পরিচয় না করাও, নাম টা তো বলো?
-আমাকে কে ভালবাসবে বলো? নাহ, কেও জোটেনি আর। কেও ভালবাসেনি এই হতোভাগা কে।
-জানো, আমার জামাইও না তোমার মতো ভালো মানুষ।আমার ভাগ্য টা আসলেই ভালো।
-বুঝলে, তোমায় সেদিন ছেড়ে ছিলাম কেন?
-ছ্যাকা দিবে বলে।
-হাহাহাহাহা
-একটা কথা আমি ভুলবো না, তুমি আমার প্রথম এবং বাল্যকালের প্রেম।
-সে জন্যই বুঝি বার বার খুঁজে বের করে কথা বলো?
-কথার যাদু টা যে তোমার প্রথম থেকেই অনেক আয়ত্ত করা। তাই মাঝে মাঝে শুনতে আসি। ভালো লাগে।
-আমার প্রতি তোমার কোনো আক্ষেপ নেই?
-না, ঐ ছ্যাকা দেয়া বাদে কোনো আক্ষেপ নেই। তোমার মতো একজন ভালো মানুষকে কস্ট দিয়ে ছ্যাকা খেয়েও আজ এতো সুখী হতে পেড়েছি সেখানে আক্ষেপ আসবে কোথা থেকে? বলো আমি অনেক কৃতজ্ঞ। আমার জন্য দোয়া করো প্লিজ।
-তোমার বুড়ি টার জন্য অনেক দোয়া রইলো আমার আর হ্যা, পাগলামি টা কমাও। এখন অনেক বড় হয়ে গেছো, আগের মতো ছোট টা তুমি আরর নেই।


শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬

গল্প? না স্বপ্ন!

বাস স্ট্যান্ডে ছেলেটি বাস মিস করে এদিক ওদিক বার বার তাকাচ্ছিলো অন্য কোনো বাস আসছে নাকি সে জন্যে। খুব অস্থির মুখাবয়ব নিয়ে সে বার বার ঘড়ি দেখছিলো আর এক হাতের তালুর সাথে আরেক হাতের তালু দিয়ে থাপ্পর দিয়ে বলছিলো 'শিট!! ধ্যাত শালার আজকে আর যাওয়া হবে না' 
পিছন থেকে এসে কেও একজন একটু বিভ্রান্তিকর সুরে ডেকে উঠলো "উম্মম্ম, মিডি? মিডিয়া......?'
ছেলেটি হকচকিয়ে পিছ ফিরে তাকালো- একটা মেয়ে, চোখ দুটো বেশ ঘোলাটে ছল ছলে, মাথার চুল গুলো আধা বাঁধা আর আধা খোলা, তার কিছু টা আবার সামনের দিকেও বেয়ে পড়ছে, চোখের সামনে থেকে বার বার বাম হাত দিয়ে সেগুলো সরিয়ে সে আবারো বলে উঠলো 'তুমি মিডি না? মানে মিডিয়া, রাইট?'
ছেলেটি তখনো দেখছিলো, 'মেয়েটির আবার পিছনের দিকে খোপা করা বেনী, সাথে একটা পেঞ্চিলের মতো কিছু একটা আছে সেটা দিয়েই হয়ত আটকে রেখেছে খোপা টি'
-হ্যাঁ, আমিই মিডি মানে মিডিয়া।
-চিনতে ভুল করিনি তাহলে।
-তুমি... তুমি, হ্যাঁ, তুমি নাবিলা!?
-তুমিও আমাকে চিনতে পারলে! এটা এক্সপেক্টেড ছিলো না।
-বাহ, তুমি যদি আমাকে চিনতে পারো তাহলে আমি চিনবো না কেন?
-অনেক্ষন ধরে দেখছিলাম, বাসের জন্য অস্থির হয়ে এপাশ-অপাশ করছো।
-বাস তো মিস করে ফেলেছি।
-আমি জানি সেটা, পার্থক্য তুমি আধা ঘন্টা ধরে এপাশ-অপাশ করছো আর আমি চিল হয়ে কাউন্টারের পাশে বসে চকবার টা গিলছিলাম কারণ আমি জানি আর কোনো বাস আসবে না আজ এ পথ দিয়ে।
-তুমি এখানে কি করে?
-বারে, এটা তো আমার দাদু বাড়ি, প্রায়ই আসি আমি, এমনি তেই মন ভালো করার জন্য। তুমি এখানে কি করে?
-আমার ফুফু থাকে এখানে, আমিও মন ভালো করতেই আসি।
-তোমার বুঝি মন অনেক খারাপ তাহলে?
-তা আপনারও তাই বোধ করি?
-চলো, ফিরে যাই। তোমার ফুফু বাড়ি কোণ দিকে?
-আমার টা ব্রিজ পারে, তোমার টা?
-ব্রিজের পরের পারা তে।
নাবিলা সামনের দিকে হাটা দিলো, মিডি ওকে ফলো করতে লাগলো। সে আলখাল্লা টাইপের কিছু একটা পড়ে আছে আর একটা সেই গঞ্জি পড়েছে সেখানে আবার সুন্দর করে লেখা " মাইন্ড ইজ এ বিউটিফুল অ্যাসেট অফ লাইফ, কিপ ইট ফ্রেশ " হাতে আবার চুড়ি আছে তার কানে দুলও মানে পুরই ক্লাসিক আর রক এর সংমিশ্রন যেটাকে বলে। কাঁধে একটা ব্যাগ দুপাশে স্কুলে পড়া বালকের মতো ঝুলিয়ে টই টই করে হেটে যাচ্ছে। একটা ভ্যান ঠিক করলো সে, ভ্যান টি তে আবার ছিট করা। মানে তার চারদিকেই বসা যাবে। মিডি আগে আগে উঠে গেলো এবং হাত দিয়ে নাবিলা কে ধরে টেনে উঠালো। দুজনে মুখোমুখি হয়ে দু'পাশে বসলো। গ্রামের মেঠ পথ দিয়ে ভ্যান চলছে আর ওরা কথা বলছে।
-আঙ্কেল-আন্টি কেমন আছেন?
-হ্যাঁ ভালই। কিন্তু ছোট বেলার মতো ইয়াং নাই একটু বয়স বেড়ে গেছে।
তা আমার আঙ্কেল-আন্টি কেমন আছে? তাদের আর জীবনে দেখলামো না।কারো যে কোনো খোঁজ-খবরই নাই যা ঐ ফেসবুকেই দেখা।
-তুমি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট এ আছো?
-না, নেই তবে তোমাকে ফলো করি। আপনি তো সেলিব মানুষ। সবাইকে এক্সেপ্ট করেন না তাই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেইনি। ফলো করি।
-ঐটা কে ফলো বলেনা, স্টক করা বলে।
-হাহ,এসব বইলো না বুঝছো? তোমারে তো তাও আমি ফলো করি। তুমি তো আমারে চিনই না।
-কিভাবে চিনবো? কখনো তোমার সাথে আমার না কথা হয়েছে না দেখা?
-তাই বলে ভুলে যাবা?
-ভুলে গেলাম কই?
-হাহ...
নাবিলা চোখে কাজলও দিয়েছে। কি সুন্দর হয়েছে দেখতে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও গ্রামে না কোনো পাহাড়ে উঠবে সেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু বেশ লাগছে। চোখের গ্লাস গুলো ভেদ করে তার চোখে চোখ পড়তেই তিল ওয়ালা টোল পড়া ঠোটের কোণে একটা হাসি দিয়ে সে বলে উঠলো-
-অনেক মোটা হইছো তুমি
-আমি মোটাই।
-না মোটা ভালো।
-দেখ, পচাবা না।
-একদম পচাচ্ছি না। মোটা মানুষ আমার ভালো লাগে। কিউট কিউট।
-হাহ, জানতাম পচাবাই।
-আচ্ছা, পচালাম কই? তোমাকে আমার কাছে পুরো একটা কুং ফু পান্ডা মনে হয়।
-তোমার আসলে ছোট বেলার অভ্যাস টা যায় নাই, না?
-হিহিহি, তা কি করছো আজকাল? ইংলিশ সাহিত্য পড়তে পড়তে তো দেখতেছি একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা তোমার।
-আমার কথা রাখো, তুমি আমার ভালই খোঁজ রাখো আমি বুঝতে পারছি। তুমি কি করতেছো?
-আমি স্থাপত্য নিয়ে আছি প্লস। খুবই বাজে অবস্থা আমার আর বইলো না।
-ও, আর্কিটেক্ট!
-কেন ডাক্তার ভাবছিলা নাকি?
-নাহ, এই ভাবে কোনো ডাক্তার ঘুরে ফিরবে না।
-কিভাবে?
-এই যে ওয়েস্টার্ন আর বাংলার যুগল নিয়ে।
-আমি জানি, তুমি প্রথম থেকেই আমাকে খুব লক্ষ্য করছো।
-না বেশ লাগছে কিন্তু তোমাকে। ভালো লাগছে।
-থাঙ্ক ইউ, আপনি সচারচর কমপ্লিমেন্ট দেন না তাও যে দিলেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
-মেনশন নট কিন্তু আমি যে কমপ্লিমেন্ট দেই না এইটা সঠিক না। দেই, দেই। কিন্তু সে আপনি জানেন কি করে?
-আমি অনেক কিছু জানি, যাইহোক, আমার এই অবস্থা কারণ সকাল বেলা ঘুম থেকে না উঠে বেলা করে উঠেই দৌড় দিতে হয়েছে আমার। তাই কোনো রকমে আর কি বের হয়ে গেছি।
-বোঝা যাচ্ছে। চোখে কাজল দেয়া ঠিকই আছ।
-মাস্কারা।
-ওত বুঝি না ।
-অকা, বোঝা লাগবে না।
-পাকনা
-ফ্রান্স প্লিগ
-অকা
-হাহাহা
-তুমি অনেক মিশুক, কিন্তু এতো গম্ভীর থাকো কেন?
-এমনি, বোধয় ওভাবে থাকতেই ভালো লাগে বা ওটাতেই আমাকে মানায়।
ভ্যানের ওপাশ থেকে নাবিলা এপাশে এসে বসলো। মিডি একটু অপ্রস্তুত হলেও সে বুঝতে দিলো না কিন্তু একটু পর নাবিলা এসে মিডির হাত সড়িয়ে বাহু তে মাথা রাখলো। চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে এখন সে। এ যেনো অন্য কেও। এতোক্ষন যাকে দেখেছি এক মাথার খোপা ছেড়ে দেয়াতেই সে যেন অন্য কেও হয়ে গেলো! মিডির সব কিছু গোলমাল লাগতে শুরু করলো।
-আচ্ছা, এখন পর্যন্তও আমাদের দেখা কেনো হয়নি? তুমি কেন কিছু করতেছো না? প্লীজ এমন কোন ভাবে আমাকে বানাও যে আমাদের দেখা হয়।
-মানে?
-মানে আবার কি? এভাবেই যাবে? দেখা করতে হবে না আমাদের?
-তাহলে, আজ? আজ কি হলো? তুমি আমার সামনে বসে আছো, এটা কি?
-এটা কি তুমি জানো না? না জানতে চাও না?
-জানতে চাই না।
-আচ্ছা, নাবিলা কেন?গল্পের প্রয়োজনে?
-গল্প?
-না স্বপ্ন!
-জানিনা
-সে নামে কি ছোট বেলায় কেও ছিলো?
-ছিলো তো, ছোট বেলার খেলার সাথি।
-তাকে ভালবাসতে?
-হাহাহাহাহাহা
-হাসো কেন?
-এতো ছোট বেলায় খুব হলে এক বেলা খেলতে না পারলেই কান্না কাটি করে পোলাপাইন। আর ভালবাসা? কি সব যে বলতেছো তুমি।
-তাহলে বড় হয়ে?
-দেখ, আমি এখনো বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে আর ঐ নামটাই বা কেন আসলো মাথায়।
-তোমার অবচেতন মন আসলে অনেক কিছু নিয়ে খেলা করে মিডি। নাম টা কোনো ব্যাপার না। ছোট বেলার খেলার সাথি টাও ব্যাপার না। ব্যাপার আমি আর তুমি।
-সেটা কেমন?
মিডির হাতের সবগুলো আঙ্গুল খুব শক্ত করে ধরে, সে বলতে লাগলো।
আমি জানি কোনো না কোনো নামে আমাকে আসতেই হবে সে গল্পের প্রয়োজনে হোক বা স্বপ্নের, কল্পের বা বাস্তবের কিন্তু আসতেই হবে। সে নাম এভাবে না, আমি চাই তুমি আমাকে দাও। অবচেতন মনে না চেতন মনে, ইচ্ছে করে, ভালবেসে। স্বপ্নপরী তোমার একটা কল্পনা কিন্তু তার তো নাম থাকা চাই, তাইনা? আদরের নাম? মিডি প্লীজ আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা, অনেক বেশী ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে। কিছু একটা করো, তোমার গল্পে, কল্পে বা বাস্তবে আমায় রূপ দাও, একটা নাম দাও? প্লীজ!
ঘুম টা ভেঙে গেলো।






শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬

কাল্পনিক কথোপকথন! (স্বপ্নপরী)

-জানো, আজ খুব সুন্দর একটি চাঁদ উঠেছে মাথার উপরে। একদম তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর জন্য একটি পারফেক্ট রাত।
-ওমা! তাহলে রাত জেগে চাঁদ দেখবে কে?
-কেন তুমি দেখবে, তুমি চাঁদ দেখবে আর গাইবে।
-কি গাইবো?
-ঐ যে, আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেল বনে।
-আচ্ছা আর কোনো গান নেই?
-হুম, আছে তো। নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আঁকাশে টাও গাইতে পারো!
-কিন্তু আজ তো আকাশে বাঁকা চাঁদ না।
-তাতে কি? আমার নিশিত রাতের বাদল ধারাও গাইতে পারো।
-কি যে বলো না, এমন রাতে ঐ গান?
-তোমার সুরে সবই শুনতে ইচ্ছে করে, ভালো লাগে শুনতে।
-হইছে, আর ফোলাতে হবে না আমাকে, এমনেই অনেক ফোলা হয়ে গিয়েছি।
-আচ্ছা, এখন লক্ষিটার মতো আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে আর গান গেয়ে শোনাবে, আমি ঘুমিয়ে পড়বো।
-তারপর? আমি একা হয়ে যাবো না?
-আমি তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়লে তুমি একা হয়ে যাবে, সত্যি?
-না, তা হবো না। তুমি ঘুমালে তোমাকে একদম বাচ্চাদের মতো লাগে জানো?
-আমি ঘুমালে তুমি কি করো?
-তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি?
-সারাক্ষণ!?
-হ্যাঁ, সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকি, কি করবো বলো? এতো মায়া তোমার চেহারা তে।
-পাগলি একটা।
-কিন্তু আজ কেন জানি ঘুমুতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না, আমার কোলে শুয়ে থাকো, আমার মাথার খোলা চুল নিয়ে তোমার হাতের স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করছে, মন ভরে গল্প করতে ইচ্ছে করছে, অন্য সব কিছু কিন্তু প্লীজ ঘুম না।
-হুম, আচ্ছা আজ ঘুম ক্যানসেল!
-সত্যি?
-হ্যাঁ, আজ সারারাত আমি তোমার পাশে বসে, কোলে শুয়ে চাঁদ দেখবো আর গল্প করবো।
-তুমি অনেক টায়ার্ড না? থাক, বাদ দাও, তুমি বরং আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়।
-নাহ, যার এমন একটা পরী আছে সে কি টায়ার্ড হতে পারে? মানায় সে?তবে শর্ত আছে!
-কি শর্ত?
-আমাকে চা বানিয়ে খাওয়াতে হবে, আর গান শোনাতে হবে।
-দুইটার একটাও আমি ভালো পারি না কিন্তু তুমি পারো।
-আমি কি পারি?
-ভালো গান এবং চা দুটিই পারো।
-তাহলে তুমি কি পারো?
-আমি সত্যি কিছু পারি না।
-হাহ, আমার বউ হয়ে এমন অকর্মা? আচ্ছা চা টাও আমি বানাবো, গান না হয় দু'জন একসাথেই গাইবো। রাজি?
-খুব রাজি, আচ্ছা একটা কথা বলি?
-বলো
-তুমি এতো ভালো কেন? এতো ভালো টা যে ভালো না, জানো না?
-জানি, সে জন্যই তোমার দেখা পাচ্ছি না।
-চেস্টা করছো?
-চেস্টা করে কি তা হয় বলো?
-হয় তো, কতোদিন হয় চোখ মেলে আমায় ডাকো না তুমি জানো?
-স্বপ্নপরী
-হুম,
-জানো আজ আকাশে সত্যি অনেক সুন্দর একটি চাঁদ উঠেছে, খুব একা লাগছে আমার। তোমার খোলা চুলে, চোখের কাজলে, কানের দুলে, হাতের চুড়িতে, কপালের ভাজে, ঠোঁটের টোলে,আর তোমার কোলে আমার খুব হারাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
" জীবনেরও পথে পথে চলিতে
যতো আশা নিয়ে ছিলো কুড়ায়ে
ব্রজমতিরহার যেনো ভুলিতে
ভিখারীনি পেলো আজ .....ফিরায়ে
এ জীবনে যতটুকো চেয়েছি
মন বলে তারও বেশি পেয়েছি, পেয়েছি...
নিশিরাত, বাঁকা চাদ আকাশে
চুপি চুপি বাশি বাজে বাতাসে...বাতাসে
নিশি রাত, বাঁকা চাদ আকাশে। "
ছেলেটির নিকোটিন শেষ, ঘুমোতে যাবার সময় হয়ে গেলো, ঘুম না থাকলেও ঘুমোতে হবে কারন তাঁর শরীর জুড়ে ক্লান্তি আর চোখে এক রাশ ঘোলাটে গ্লানি।