রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৩

মৃত্যু !! (কল্পনাময়ী মৃত্যু আমার-II)

সব ভালবাসা আর কান্নাময় চোখগুলো ভিজিয়ে ব্রেইন টিউমার আমাকে আর  এই মায়া ভরা পৃথিবীতে বাঁচতে দিলো না...

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অনুভূতি টা ছিলো অনেক আনন্দের সাথে অনেক বেশী কস্টের !
আনন্দের এ জন্যই যে আমি চলে যাচ্ছি, শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার অস্তিত্ব।
আমাকে আর রাতের পড় রাত কষ্ট করে ঘুমহীন চোখে লোনাময় পানি ফেলতে হবে না।
আমাকে আর এই পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতা  দেখতে হবেনা যেথায় মানুষ নামের  অমানুষ বেড়ে যাচ্ছে দিনেকদিন...যাদের কষ্টে আমিও অনেক আহত হয়েছি।
শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেলাম তাদের থেকে।

আর কষ্ট হচ্ছে “বাবা-মা” !!
একটি সন্তান আমি তাদের,কি নিয়ে থাকবে তারা ?
তাদের অসহায় করে চলে যাচ্ছি।
মা টার হাওমাও করে কান্নার শব্দ শেষ নিঃশ্বাস ছাড়া পর্যন্ত কানে ভেসে আসছিলো,
আর চোখে বাবাকে দেখতে পেলাম এক মুহূর্ত ! পাথরের মত বসে আছে এক কোনায় আর পাথর থেকে যেনো টিপ টিপ করে পানি পড়ছে...

কেও আমাকে যেতে দিতেই চাচ্ছেনা !!

আমার আপু টা কে দেখতে পারছিনা। হয়তো ভাইয়ার চলে যাওয়া সে কোনো অন্তরাল থেকে দেখছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকছে কিন্তু সে শব্দ যে কানে আসছে না।

সপ্নপরী টা হঠাৎ ঘোলাটে হয়ে চলে আসলো আর বলল “আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছো?”
এই তুমি বলেছিলে আমাকে কখনো হাত ছাড়বেনা ?
এই তোমার ভালবাসা,তাইনা?
আমাকে একা রেখে চলে যাবে?
কোনো উত্তর দেয়ার মতো শক্তি বা ক্ষমতা কোনোটাই পাচ্ছিলাম না।

শেষ বারের মতো চোখটা একটু খুলতে চাইলাম কিন্তু হঠাৎ করেই আমার প্রিয় দাদু ভাই এসে গেলো !!
আমাকে বলতে লাগলো “দাদু ভাই...আর তো চোখ খুলতে পারবেনা। খুলেই বা কি হবে বলো ? তারচেয়ে  বরং আমার হাত টা ধরো এবং চলো”
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?’
দাদু ভাই বলল “সেটা গেলেই দেখতে পারবে,এই পৃথিবীতে তো আর তোমার যায়গা নেই দাদু ভাই। এখন থেকে সেই আগের মতো আমার সঙ্গি তুমি।
তুমি আমার হাত টা ধরো”......!!

মৃত্যুর ১০ বছর পড়......

মাঃ এখনো আমার ফ্রেম এ বাঁধা ছবির দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে
আর কাদে,বলে তার বাবা এই করতো,সেই করতো !
আলতো করে হাত বুলিয়ে তারপর ছবিটা বুকে জরিয়ে নেয়  !
যেনো ছবিটাই তার এখন তার একমাত্র সম্বল।,
কখনো বুঝতে পারিনি আমার মা আমাকে এতোটা জানে,ভালবাসে ?
আমার সব গোপন কষ্ট,দুঃখ, আনন্দ, হাঁসি, সুখ, সব কিছুই সে জানে !!
এতোটা ভালো বোধয় সব মায়েরাই তার সন্তান কে বাসে,তাইনা ?
এ কি বলছি বোকার মতো ? সে যে মা ! “মা”


বাবাঃ হঠাৎ হঠাৎ আমার কথা ভেবে আনমনা হয়ে পরে...অনেক বয়স হয়ে গেছে তবুও হঠাৎ দাঁড়িয়ে দেয়ালে টাঙানো আমার ছবির দিকেতাকিয়ে এক নাগারে চুপ করে থাকে অনেকক্ষণ তারপর তার চোখ বেয়ে গরিয়ে পড়া অশ্রুকণা গুলো বলে দেয় বাবার ভেতর টায় কি বয়ে যাচ্ছে।
বাবারাও বোধয় এমনি হয়,পাথরের মতো শক্ত আবার ভিতরে নরম...সন্তানের জন্য নিজের সবটুকু দিতে পারে,তাইনা?

আপুঃ আপন কোনো বোন আমার ভাগ্যে জুটে নাই তবুও আমার এই আপু টা আমার আপন এর চাইতেও বেশী।আমার আপু টা বেশ সুখী তার জীবনে এখন।
ওর সব স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে ধীরে ধীরে তবুও কিছু কষ্ট তো থাকেই।
মাঝে মাঝে আমার কথা মনে করে কেঁদে ওঠে আর তখন ওর হাত ধরে তখন ওর ভালবাসার মানুষটি ওকে সান্ত্বনা দেয়। দু এক ফোঁটা জল পড়তে থাকে তারপর থেমে যায়...সেই দু এক ফোঁটাতেই হয়তো ওর ভাইয়া ওর মাঝে বেঁচে আছে !

সপ্নপরীঃ স্বপ্নের রাজ্যে যাকে সবসময় পরী করে রেখেছিলাম সে এখন আর আমার নেই... কারন আমার তো অস্তিত্বই নেই ! স্বত্বার মাঝে আমি তাকে পাইনি তাই তার থেকে আমি আজ অনেক দূরে।
স্বপ্ন রাজ্যে আমার পরী তার কোনো স্বপ্ন রাজাকে খুঁজে পেয়েছে এবং তাকে নিয়ে সে ভালোই আছে।
ঐ রাজা আমার স্বপ্নপরীকে নাকি অনেক ভালবাসে,আমার চাইতেও বেশী ?
নাহ !! আমার চাইতেও বেশী আমার সপ্নপরী কে কেও ভালবাসতে পারেনা তা আমি হরফ করে বলতে পারি কারন... আমি যে এখনো মৃত স্বত্বার মাঝেও সপ্নবাজ হয়ে সপ্নপরী কে ভালবাসি।

সপ্নপরী নাকি তার রাজাকে আমার কাহিনী শোনায় !! তার রাজা অনেক ভালো তাই আমার কথা শুনেও তার হিংসা হয়না বরং আমার সপ্নপরীকে তার বুকে জড়িয়ে নেয়। তখন আমার সপ্নপরী পৃথিবীর সেই সুখটুকুই পায় যা আমি তাকে দিতে চেয়েছি সর্বদা...
সেই মুহূর্তে আমার যায়গা সেখানে কতোটুকু আমি জানিনা বা আছেই কিনা তাও বলতে পারবো না।

বন্ধুরাঃ মিডি নামের একটা দোস্ত ছিলো... এখন আর নেই !! অনেক হারামি ছিলো... কেন যে এই ভাবে চলে গেলো ও !!


মানুষের মৃত্যু মানুষকে অনেক দূরে নিয়ে যায়
আমাকেও অনেক অনেক অনেক দূরে নিয়ে এসেছে
তবে স্বত্বার কোনো মৃত্যু নেই
আমার স্বত্বায় এখনো আমি বিচরন করি !
মায়ের চোখের জলে
বাবার থমকে যাওয়া চোখের ঝলকানিতে
আপুর স্মৃতির মাঝে
আর
সপ্নপরীর কোনো এক হারিয়ে যাওয়া অতীতে......

তবুও আজ বিচরন করি আমি পৃথিবীর মাঝে না হয় অন্য কোথাও
স্বত্বার মাঝে খুঁজে পাই আপন হারানোর বেদনা টা কে
হাসি সময়ের গতি দেখে
মানুষের ভালবাসার সীমাবদ্ধতা দেখে
তবুও ভাবি ‘মৃত্যু মানুষকে দূরে নিয়ে যায় তবুও কোথাও না কোথাও বাচিয়ে রাখে’  

 এখানেই না হয় মৃত্যু হলো আমার...

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অনুভূতি টা ছিলো অনেক আনন্দের সাথে অনেক বেশী কস্টের !
সত্যি বলছি ‘অনেক আনন্দের সাথে অনেক বেশী কস্টের !”


-অবয়ব সিদ্দিকী মিডিয়া  


                    মেঘলা আকাশে কষ্টের লীলাভূমি (Aboyob Siddiquie Medi's Photography C)