রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

"মন্তুর রোযা"

ওর নাম মন্তু, মুন্তাসির উদ্দিন কিন্তু সবাই মন্তু বলে ডাকে।
মন্তুর বাবা নেই,মন্তুর বয়স যখন চার তখন তার বাপ কি এক রোগে মারা গিয়েছে। মা আছে তবে আরেকবাপের সাথে চলে গিয়েছে।মন্তু কে মাঝে মাঝে এসে দেখে যায় কিন্তু মন্তু কে কখনো নিয়ে যায় না । মন্তু শহরের চার কোনো ঐ সিগনাল টার পাশে যে বাস গাড়ি গুলো রাতে জমা হয় তার পাশেই এক অস্থায়ী ঘরে থাকে। ঘরটি কয়েকটি কাঠি আর সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে বানানো।
সারাদিন মন্তুর অনেক কাজ,সকাল বেলা বের হয়ে চায়ের দোকানে যেয়ে রহিম বস এর কাছ থেকে চা নিয়ে পাশের হোটেল এবং অফিস পাড়া তে চা দিয়ে আসে তারপর সকালের ডিউটি শেষ হলে রাস্তায় ফুল নিয়ে নেমে যায়।বিকেল পর্যন্ত ফুল বিক্রি করে সে নেমে যায় রাস্তার ফেলে দেয়া বোতল এবং কাগজ গুলো কুড়ে কুড়ে তা বিক্রি করার জন্য কারন সেগুলো থেকে আসা টাকা দিয়ে রাতে তার খেতে হবে।সকালে চায়ের দোকানের রহিম বসের চায়ের ডিউটি থেকে একটা বন রুটি আর চা মেলে আর দুপুরে ফুল বিক্রি করে যা হয় তা দিয়ে কোন মতে দুপুরটাও সে চালিয়ে নেয় তবে মাঝে মাঝে ফুল বিক্রি হয় না তাই দুপুর টাও না খেয়ে পার করতে হয়। মাত্র ৬ বছর বয়স মন্তুর!
গত কাল, ফজল কাকার কাছ থেকে সে শুনেছে আজ থেকে নাকি রোযা শুরু। সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে এবং সন্ধের সময় ইফতার করতে হবে তারপর নাকি রাতের খাওয়া টা ঠিক থাকবে আবার শেষ রাতে যখন ভোরের আযান দেয় তখন খেতে হবে। এভাবে একমাস চলবে। এ সময় টায় নাকি মানুষজন অনেক দান-খয়রাত করে তাই খাওয়া-দাওয়া নিয়ে খুব একটা ঝামেলা হবে না।মন্তু ফজল কাকা কে জিজ্ঞেস করলো 'সত্তি?এই মাসে যার কাছে যাইবো সেই খাওন দিবো?' ফজল কাকা একটু চিন্তা করে বললো 'অন্তত ইফতারের সময় তো দিবোই,আর রেযেকের মালিক আল্লাহ।রোযা রাখবি আল্লাহ দয়া করবো'
মন্তু খুব খুশি হয়ে গেলো,ফজল কাকার কাছ থেকে রোযার সব নিয়ম শুনে নিলো।
আজ রোযা,মন্তু আগ রাতে কিছু না খেয়ে খাবার টা শেষ রাতে খেলো।লেক পারের যেই চাচিটা ইটের মধ্যে বইতে দিয়া খাইতে দেয় সে আজকে কাওয়া বিরানি রাঁধছে। মন্তু কে দেখে চাচি আগের দামেই বিরানি দিলো তাই মন্তু খুব খুশি এবং মন্তু ভাবতে লাগলো রোযা টা সারা বছর থাকলে বোধয় প্রতি রাতে কাওয়া বিরানি খাইতে পারতো ।
সকাল থেকে মন্তু না খাওয়া,সে রোযা রেখেছে।নিয়মিত কাজের সাথে সাথে আজ মন্তু মসজিদে যেয়েও নামাজ পড়ছে।মসজিদে যখন ঢুকছে সবাই ওর দিকে কিভাবে জানি তাকাচ্ছে।তাই যেই কাকায় মসজিদে আজান দেয় সেই কাকা মন্তুরে ১০০ টাকা দিয়া বলছে পরের দিন থেকে যেনো অন্তত একটা পরিষ্কার কাপর পইড়া মসজিদে আসে। সে আনন্দে চোক্ষে দেখতেছে না। সেই টাকা নিয়ে সে চায়ের দোকানের রহিম বস রে বলছে তারে একটা কাপর কিনা দিতে। রহিম বস বলছে কিনা দিবে। সে আরেকবার চিন্তা করলো রোযা টা সারা বছর কেন থাকেনা?
সারাদিন পার হয়ে গেছে, মন্তুর কামাই হইছে মোট ৩০ টাকা। রহিম বস ২০ টাকা আর ফুল বিক্রির ১০ টাকা। কেও বোধয় রোযার মাসে ফুল কেনে না,এমনটাই মনে হলো মন্তুর।৩০ টাকা দিয়ে কি ইফতার করা যাইবো? মন্তু ভাবছে,রাইতের খাওন তো দুই বার। নাহ, সে একবার ঐ শেষ রাইতেই খাইবো । সে মনস্থ করে ফেললো আর ফজল কাকা তো বলছেই ইফতারের সময় এমনেই খাওন পাওয়া যায়। সে আজ অনেক অনেক খাওন দেখছে সকল হোটেল আর বড় বড় দোকানের সামনে সজায়া রাখছে। সে কল্পনা করতে লাগলো,সে পেট ভরে খাচ্ছে... এভাবে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো মন্তু বুঝতে পারে নাই। খুব বেশী ক্ষিদে তে তার পেট ব্যাথা করছে।
ইফতারের সময় হয়ে গেছে, দোকান গুলোতে এতো ভীর যে মন্তু দিশা পাচ্ছিলো না কি করবে,যে দোকানেই যাচ্ছে তাকে ধোমক দিয়ে তারিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিছু দোকানের সামনে দিয়ে তো তাকে হাটতেই দিতেছে না আবার কিছু দোকানের সামনে কেন,দূর থেকেই লাঠি দিয়ে যেভাবে কুকুর তাড়ানো হয় সেভাবে তাকে লাঠি দেখিয়ে হুংকার দেয়া হচ্ছে।
আযান দিয়ে দিলো, ইফতারের সময় হয়ে গেছে। মন্তু রাস্তার মোড়ের খোলা যে দোকান ডা ভীর কম ঐটার কাছে যেয়ে ড্রাম থেকে পানি নিয়ে,পানি খেয়ে রোযা ভাংলো। ৩০ তাকা দিয়া দোকান থেকে ইফতার কিনে সে ইফতার খেতে খেতে হাটা দিলো।একটা বেগুলি,বড়া সাথে মুড়ি মাখাইন্না আর জিলাপি,খাইতে ভালই মজা, রাস্তার পাশে একটা বড় দোকানের সামনে এসে সে দাড়িয়ে গেলোঃ
"খোলা একটা যায়গায় অনেক গুলা টেবিলে অনেক অনেক ভালো খাবার রাখা এবং সেখানে মানুষ গুলো বসে খাওয়া-দাওয়া করছে।কতো খাবার,কতো কিছু! এক টেবিলে মন্তুর চোখ আটকে গেলো, একটা বাচ্চা ছেলে বয়সে মন্তুর সমান হইবো। কিছুই খাইতে চাইতেছে না তার আম্মায় তারে জোড় করে খাওয়াইতে চাইতেছে।শেষ পর্যন্ত খাওন ডা টেবিলের পাশে ঢেল দিয়ে ফালায়া দিলো তারা। মন্তু যেয়ে খাবার টা উঠিয়ে নিলো দেখলো সকালে যে ও বন রুটি খায় ঐটার মতো দেখতে কিন্তু ভিতরে মাংশ দেয়া! আরে বাবা !! গরুর মাংশ মনে হয়!! সে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে খেতে লাগলো। একটু পড় সে তার পাশে তাকিয়ে দেখলো তার মতো অনেক গুলা মন্তু একই কাজ করছে। ওরা একজন আরেকজন এর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো এবং জগৎ জয় করা এক হাসি দিয়ে ইফতার করতে লাগলো ।"
মন্তু ভাবতে লাগলো "ফজল কাকা হাঁচাই কইছিলো ,খাওন পাওয়া যায় রোযার মাসে অন্তত ইফতারের সময় তো পাওয়াই যায়,আর রেযেকের মালিক আল্লাহ। রোযা রাখলে আল্লাহ দয়া করবো' সে মনস্থ করলো সে এক মাস রোযা রাখবেই রাখবে যতই কস্ট হোক আর আল্লাহ'র কাছে দোয়া করতে লাগলো রোযা টা যেনো সারা বছর থাকে।


A Tale Of Love

Would you be my fairy tale,
Could be my love of pale,
In such lonesome night,
On much darkness fight,
Love that can heal this eyes,
Song that can write in the flies.
Hath you ever come to thy life,
Soul thee never meet in the pride,
Hope yet living inside,
One day thee would be my side.
The seven kingdom
or the whole earth,
Even the evil rises again and again,
Thy and I will meet in a tale of love.
In a fiction or imagination
Or in a friction and true attraction,
I will never stop,
Thy will ever in a dot,
Till the last birth,
Breathing until met with the dope,
I would not take anything for granted,
But thy, in me always find the life in a tale of love.

A Tale Of Love
Aboyob Siddiquie Medi


শনিবার, ১৮ জুন, ২০১৬

কথোপকথন-০৩

-এখন গান গাও না?
-না।
-কেন?
-সুর আসে না।
-একজন গাতকের গলায় সুর আসেনা বলছো? 
-না, হৃদয়ে আসে না।
-কেন আসে না?
-জানিনা।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-করো।
-এভাবে নিজের সব কিছু কে মরে দিতে দিলে কিছু বাঁচবে?
-কি বাঁচানোর কথা বলছো?
-তুমিই না বলো, তুমি তোমার স্বপ্নপরীকে খুব ভালবাস?
-হুম
-সে যদি গান গেতে বলে?
-আবার গাবো!
-তখন যদি সুর না ওঠে?
-উঠবে!
-কি ভাবে বলছো সেটা?
-আমি জানি।
-তাই যেন হয়।
-আমি বলবো কিছু?
-হুম, বলো।
-কেও যদি তোমার সত্ত্বা কে খুব যত্ন করে মেড়ে ফেলে তাহলে তুমি কি পারবে কিছু করতে?
-খুনি টা কে?
-সপ্নপরী!
-মানে!!??
-হাহাহাহা...ট্রাজেডি! সবার জীবনেই থাকে।
-হেয়ালি রাখবে? প্লীজ বলো না।
-না, এমনি মজা করছিলাম।
-আমি জানি মজা করছিলেনা, প্লীজ বলো।
-বলার মতো কিছু নেই, আমি গান গাইতে ভুলে যাইনি। শুধু শোনাতে ভুলে গেছি।
-টপিক চেঞ্জ করছো?
-না, সপ্নপরী শুধু মাত্রই একটা কল্পনা। সেই কল্পনাতেই তাঁর জন্ম হয়েছিলো এবং তাঁর হাতে আমার মৃত্যু হয়েছে।
-পাগল হয়ে গেছো তুমি।
-গান শুনবে?
-সত্যি? শোনাবে?
"কার যেন ছবি আঁকি, মনে আমি গোপনে
সে আমায় ধরে রাখে, আড়ালে স্বপনে
যতো ভাবি ভুলে যাবো, আরো বেশী মনে পড়ে
যতো কাছে পেতে চাই, সে তো যায় দূরে সরে,
দুঃখ দেয়াল ভেঙে, স্বপ্ন ছোঁবে আমাকে
ঘুমপরীদের সাথে, ভাসবো সুখের ভেলাতে...।।
প্রতি রাতে স্বপ্নরা আমাকে কাদিয়ে যায়,
দু চোখে জল এসে, আমাকে ভিজিয়ে নেয়,
কেন তবে সৃতিরা আমাকে বেদনায়,
ডুবিয়ে যায় একা পেয়ে, একা আমি কোন অজানায়? "

Aboyob Siddiquie Medi
জুন ০৬, ২০১৬

কথোপোকথন-০২

-সব তোমার দোষ
-কিভাবে?
-তুমি আমাকে, ও সময় ঐ ভাবে ছেড়ে না দিলে আমি এতো কস্ট পেতাম না।
-তো কি করতাম আমি?
-আমি বলেছিলাম, আমরা অন্তত বন্ধু হয়ে থাকি? না তোমার আমাকে ছ্যাকা দিতেই হবে।
-তোমার মেয়েটা দেখতে অনেক মিস্টি হয়েছে, মাশাল্লাহ। আচ্ছা তোমার জামাই তোমাকে ভালবাসে অনেক?
-অনেককক।
-কি, আমার থেকেও বেশী?
-তুমি আমায় ভালবাসলে ওভাবে ছাড়তে পারতে না। তোমার ছ্যাকা পোষাতে আমার আরো দু'বছর সময় লেগেছে জানো?
-দু'বছর, আর তারপর তুমি এখন একজন সুখী পাক্কা বুড়ি।
-আচ্ছা, তোমার কি অবস্থা? জীএফ কে? পরিচয় না করাও, নাম টা তো বলো?
-আমাকে কে ভালবাসবে বলো? নাহ, কেও জোটেনি আর। কেও ভালবাসেনি এই হতোভাগা কে।
-জানো, আমার জামাইও না তোমার মতো ভালো মানুষ।আমার ভাগ্য টা আসলেই ভালো।
-বুঝলে, তোমায় সেদিন ছেড়ে ছিলাম কেন?
-ছ্যাকা দিবে বলে।
-হাহাহাহাহা
-একটা কথা আমি ভুলবো না, তুমি আমার প্রথম এবং বাল্যকালের প্রেম।
-সে জন্যই বুঝি বার বার খুঁজে বের করে কথা বলো?
-কথার যাদু টা যে তোমার প্রথম থেকেই অনেক আয়ত্ত করা। তাই মাঝে মাঝে শুনতে আসি। ভালো লাগে।
-আমার প্রতি তোমার কোনো আক্ষেপ নেই?
-না, ঐ ছ্যাকা দেয়া বাদে কোনো আক্ষেপ নেই। তোমার মতো একজন ভালো মানুষকে কস্ট দিয়ে ছ্যাকা খেয়েও আজ এতো সুখী হতে পেড়েছি সেখানে আক্ষেপ আসবে কোথা থেকে? বলো আমি অনেক কৃতজ্ঞ। আমার জন্য দোয়া করো প্লিজ।
-তোমার বুড়ি টার জন্য অনেক দোয়া রইলো আমার আর হ্যা, পাগলামি টা কমাও। এখন অনেক বড় হয়ে গেছো, আগের মতো ছোট টা তুমি আরর নেই।