শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬

গল্প? না স্বপ্ন!

বাস স্ট্যান্ডে ছেলেটি বাস মিস করে এদিক ওদিক বার বার তাকাচ্ছিলো অন্য কোনো বাস আসছে নাকি সে জন্যে। খুব অস্থির মুখাবয়ব নিয়ে সে বার বার ঘড়ি দেখছিলো আর এক হাতের তালুর সাথে আরেক হাতের তালু দিয়ে থাপ্পর দিয়ে বলছিলো 'শিট!! ধ্যাত শালার আজকে আর যাওয়া হবে না' 
পিছন থেকে এসে কেও একজন একটু বিভ্রান্তিকর সুরে ডেকে উঠলো "উম্মম্ম, মিডি? মিডিয়া......?'
ছেলেটি হকচকিয়ে পিছ ফিরে তাকালো- একটা মেয়ে, চোখ দুটো বেশ ঘোলাটে ছল ছলে, মাথার চুল গুলো আধা বাঁধা আর আধা খোলা, তার কিছু টা আবার সামনের দিকেও বেয়ে পড়ছে, চোখের সামনে থেকে বার বার বাম হাত দিয়ে সেগুলো সরিয়ে সে আবারো বলে উঠলো 'তুমি মিডি না? মানে মিডিয়া, রাইট?'
ছেলেটি তখনো দেখছিলো, 'মেয়েটির আবার পিছনের দিকে খোপা করা বেনী, সাথে একটা পেঞ্চিলের মতো কিছু একটা আছে সেটা দিয়েই হয়ত আটকে রেখেছে খোপা টি'
-হ্যাঁ, আমিই মিডি মানে মিডিয়া।
-চিনতে ভুল করিনি তাহলে।
-তুমি... তুমি, হ্যাঁ, তুমি নাবিলা!?
-তুমিও আমাকে চিনতে পারলে! এটা এক্সপেক্টেড ছিলো না।
-বাহ, তুমি যদি আমাকে চিনতে পারো তাহলে আমি চিনবো না কেন?
-অনেক্ষন ধরে দেখছিলাম, বাসের জন্য অস্থির হয়ে এপাশ-অপাশ করছো।
-বাস তো মিস করে ফেলেছি।
-আমি জানি সেটা, পার্থক্য তুমি আধা ঘন্টা ধরে এপাশ-অপাশ করছো আর আমি চিল হয়ে কাউন্টারের পাশে বসে চকবার টা গিলছিলাম কারণ আমি জানি আর কোনো বাস আসবে না আজ এ পথ দিয়ে।
-তুমি এখানে কি করে?
-বারে, এটা তো আমার দাদু বাড়ি, প্রায়ই আসি আমি, এমনি তেই মন ভালো করার জন্য। তুমি এখানে কি করে?
-আমার ফুফু থাকে এখানে, আমিও মন ভালো করতেই আসি।
-তোমার বুঝি মন অনেক খারাপ তাহলে?
-তা আপনারও তাই বোধ করি?
-চলো, ফিরে যাই। তোমার ফুফু বাড়ি কোণ দিকে?
-আমার টা ব্রিজ পারে, তোমার টা?
-ব্রিজের পরের পারা তে।
নাবিলা সামনের দিকে হাটা দিলো, মিডি ওকে ফলো করতে লাগলো। সে আলখাল্লা টাইপের কিছু একটা পড়ে আছে আর একটা সেই গঞ্জি পড়েছে সেখানে আবার সুন্দর করে লেখা " মাইন্ড ইজ এ বিউটিফুল অ্যাসেট অফ লাইফ, কিপ ইট ফ্রেশ " হাতে আবার চুড়ি আছে তার কানে দুলও মানে পুরই ক্লাসিক আর রক এর সংমিশ্রন যেটাকে বলে। কাঁধে একটা ব্যাগ দুপাশে স্কুলে পড়া বালকের মতো ঝুলিয়ে টই টই করে হেটে যাচ্ছে। একটা ভ্যান ঠিক করলো সে, ভ্যান টি তে আবার ছিট করা। মানে তার চারদিকেই বসা যাবে। মিডি আগে আগে উঠে গেলো এবং হাত দিয়ে নাবিলা কে ধরে টেনে উঠালো। দুজনে মুখোমুখি হয়ে দু'পাশে বসলো। গ্রামের মেঠ পথ দিয়ে ভ্যান চলছে আর ওরা কথা বলছে।
-আঙ্কেল-আন্টি কেমন আছেন?
-হ্যাঁ ভালই। কিন্তু ছোট বেলার মতো ইয়াং নাই একটু বয়স বেড়ে গেছে।
তা আমার আঙ্কেল-আন্টি কেমন আছে? তাদের আর জীবনে দেখলামো না।কারো যে কোনো খোঁজ-খবরই নাই যা ঐ ফেসবুকেই দেখা।
-তুমি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট এ আছো?
-না, নেই তবে তোমাকে ফলো করি। আপনি তো সেলিব মানুষ। সবাইকে এক্সেপ্ট করেন না তাই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেইনি। ফলো করি।
-ঐটা কে ফলো বলেনা, স্টক করা বলে।
-হাহ,এসব বইলো না বুঝছো? তোমারে তো তাও আমি ফলো করি। তুমি তো আমারে চিনই না।
-কিভাবে চিনবো? কখনো তোমার সাথে আমার না কথা হয়েছে না দেখা?
-তাই বলে ভুলে যাবা?
-ভুলে গেলাম কই?
-হাহ...
নাবিলা চোখে কাজলও দিয়েছে। কি সুন্দর হয়েছে দেখতে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও গ্রামে না কোনো পাহাড়ে উঠবে সেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু বেশ লাগছে। চোখের গ্লাস গুলো ভেদ করে তার চোখে চোখ পড়তেই তিল ওয়ালা টোল পড়া ঠোটের কোণে একটা হাসি দিয়ে সে বলে উঠলো-
-অনেক মোটা হইছো তুমি
-আমি মোটাই।
-না মোটা ভালো।
-দেখ, পচাবা না।
-একদম পচাচ্ছি না। মোটা মানুষ আমার ভালো লাগে। কিউট কিউট।
-হাহ, জানতাম পচাবাই।
-আচ্ছা, পচালাম কই? তোমাকে আমার কাছে পুরো একটা কুং ফু পান্ডা মনে হয়।
-তোমার আসলে ছোট বেলার অভ্যাস টা যায় নাই, না?
-হিহিহি, তা কি করছো আজকাল? ইংলিশ সাহিত্য পড়তে পড়তে তো দেখতেছি একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা তোমার।
-আমার কথা রাখো, তুমি আমার ভালই খোঁজ রাখো আমি বুঝতে পারছি। তুমি কি করতেছো?
-আমি স্থাপত্য নিয়ে আছি প্লস। খুবই বাজে অবস্থা আমার আর বইলো না।
-ও, আর্কিটেক্ট!
-কেন ডাক্তার ভাবছিলা নাকি?
-নাহ, এই ভাবে কোনো ডাক্তার ঘুরে ফিরবে না।
-কিভাবে?
-এই যে ওয়েস্টার্ন আর বাংলার যুগল নিয়ে।
-আমি জানি, তুমি প্রথম থেকেই আমাকে খুব লক্ষ্য করছো।
-না বেশ লাগছে কিন্তু তোমাকে। ভালো লাগছে।
-থাঙ্ক ইউ, আপনি সচারচর কমপ্লিমেন্ট দেন না তাও যে দিলেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
-মেনশন নট কিন্তু আমি যে কমপ্লিমেন্ট দেই না এইটা সঠিক না। দেই, দেই। কিন্তু সে আপনি জানেন কি করে?
-আমি অনেক কিছু জানি, যাইহোক, আমার এই অবস্থা কারণ সকাল বেলা ঘুম থেকে না উঠে বেলা করে উঠেই দৌড় দিতে হয়েছে আমার। তাই কোনো রকমে আর কি বের হয়ে গেছি।
-বোঝা যাচ্ছে। চোখে কাজল দেয়া ঠিকই আছ।
-মাস্কারা।
-ওত বুঝি না ।
-অকা, বোঝা লাগবে না।
-পাকনা
-ফ্রান্স প্লিগ
-অকা
-হাহাহা
-তুমি অনেক মিশুক, কিন্তু এতো গম্ভীর থাকো কেন?
-এমনি, বোধয় ওভাবে থাকতেই ভালো লাগে বা ওটাতেই আমাকে মানায়।
ভ্যানের ওপাশ থেকে নাবিলা এপাশে এসে বসলো। মিডি একটু অপ্রস্তুত হলেও সে বুঝতে দিলো না কিন্তু একটু পর নাবিলা এসে মিডির হাত সড়িয়ে বাহু তে মাথা রাখলো। চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে এখন সে। এ যেনো অন্য কেও। এতোক্ষন যাকে দেখেছি এক মাথার খোপা ছেড়ে দেয়াতেই সে যেন অন্য কেও হয়ে গেলো! মিডির সব কিছু গোলমাল লাগতে শুরু করলো।
-আচ্ছা, এখন পর্যন্তও আমাদের দেখা কেনো হয়নি? তুমি কেন কিছু করতেছো না? প্লীজ এমন কোন ভাবে আমাকে বানাও যে আমাদের দেখা হয়।
-মানে?
-মানে আবার কি? এভাবেই যাবে? দেখা করতে হবে না আমাদের?
-তাহলে, আজ? আজ কি হলো? তুমি আমার সামনে বসে আছো, এটা কি?
-এটা কি তুমি জানো না? না জানতে চাও না?
-জানতে চাই না।
-আচ্ছা, নাবিলা কেন?গল্পের প্রয়োজনে?
-গল্প?
-না স্বপ্ন!
-জানিনা
-সে নামে কি ছোট বেলায় কেও ছিলো?
-ছিলো তো, ছোট বেলার খেলার সাথি।
-তাকে ভালবাসতে?
-হাহাহাহাহাহা
-হাসো কেন?
-এতো ছোট বেলায় খুব হলে এক বেলা খেলতে না পারলেই কান্না কাটি করে পোলাপাইন। আর ভালবাসা? কি সব যে বলতেছো তুমি।
-তাহলে বড় হয়ে?
-দেখ, আমি এখনো বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে আর ঐ নামটাই বা কেন আসলো মাথায়।
-তোমার অবচেতন মন আসলে অনেক কিছু নিয়ে খেলা করে মিডি। নাম টা কোনো ব্যাপার না। ছোট বেলার খেলার সাথি টাও ব্যাপার না। ব্যাপার আমি আর তুমি।
-সেটা কেমন?
মিডির হাতের সবগুলো আঙ্গুল খুব শক্ত করে ধরে, সে বলতে লাগলো।
আমি জানি কোনো না কোনো নামে আমাকে আসতেই হবে সে গল্পের প্রয়োজনে হোক বা স্বপ্নের, কল্পের বা বাস্তবের কিন্তু আসতেই হবে। সে নাম এভাবে না, আমি চাই তুমি আমাকে দাও। অবচেতন মনে না চেতন মনে, ইচ্ছে করে, ভালবেসে। স্বপ্নপরী তোমার একটা কল্পনা কিন্তু তার তো নাম থাকা চাই, তাইনা? আদরের নাম? মিডি প্লীজ আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা, অনেক বেশী ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে। কিছু একটা করো, তোমার গল্পে, কল্পে বা বাস্তবে আমায় রূপ দাও, একটা নাম দাও? প্লীজ!
ঘুম টা ভেঙে গেলো।