বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মৃত্যু

হয়তো একদিন আমিও হারিয়ে যাবো
হারানোর দেশে যেথায় সবাই একে একে হারাচ্ছে
না ফেরার বেশে,
এভাবেই চুপিসারে
না বলা যত অভিমান নিয়ে 
নীল খামে রেখে যাব মোড়ানো এক চিঠি
সেথায় গল্প থাকবে এক,
স্বপ্নবাজ নামক কোনো বালকের
থাকবে কথা তার না বলা যত শব্দে
সে চিঠি কাঁদাবে,
হয়তো বাবা কে
নয়তো মা'কে,
বা কোনো বন্ধু কে?
কিংবা তোমাদের !
বা তোদের?
হয়তো বা কোনো এক স্বপ্নপরী কে ?
না, কাঁদাবে না কাওকে ।
সে কান্না হরন করে থাকে রাতের গভীরেতে
দেয়ালে , একলা জানালার গ্রীলে
কিংবা নিকোটিন এর ধোঁয়া তে
গ্রাস করে থাকা কিছু বিষণ্ণতার ক্রন্ধনে ।
তবুও সে কান্না কাঁদায় না কাওকে,
কাঁদায় নীরব কথামালার কাব্য কে ।
হারায় না স্বপ্নবালক
তবু হারায় সে সবার থেকে ।
এভাবেই হয়তো হারিয়ে যাচ্ছি চুপি চুপি
কাওকে না বলে গল্প হয়ে ধরা দিচ্ছি,
এক নীল খামে, মোড়ানো এক গল্প বলা চিঠি তে,
ডায়রির কিছু পাতা তে,
রেখে যাওয়া স্মৃতির মুহূর্ত গুলো তে
বা মাতাল কোনো কাব্য তে...
স্বপ্নবাজেরা মরে না ,
মৃত্যু হয় তাদের অন্তর আত্মার বাজ ভাঙা কোন স্বপ্নের দুঃস্বপ্ন তে ।
বুঝতে না পারা সকল ভীরে,
অবুঝ সঙ্গিদের লোক দেখানো বোঝাপড়া তে
নিঃস্বতায় তাঁর মৃত্যু হয় হারিয়ে যাওয়া তে,
সবার তরে
সবার মাঝে
ভালবাসা তে
নিশ্চুপে
নিভৃতে
নীরবে
একাকি তে ,
তোমাদের ব্যাবহার করা পণ্যের
শেষ অংশে ।
হারিয়ে যায় স্বপ্নবাজেরা,
আফসোসে তবু তাদের বাচিয়ে রাখো তোমরা
মিথ্যে এক করুণা তে ।
মৃত্যু
Aboyob Siddiquie Medi
(৩০ সেপ্টেম্বার, ২০১৫ - রাত ৩ টা)

নিলাদ্রি নীলাম্বরী

সে আজ চোখে কাজল দিয়েছে,
নাকে নাকফুল পড়েছে,
ঠোটে হাল্কা লিপ্সটিক দেয়ার কারনে তাঁর ঠোটের উপরের তীল টি বেশ লাগছে আজ,
কানের দুল গুলোও বেশ চোখে ধরা দিচ্ছে,
কপালে টিপের রঙের সাথে মিলে পড়নের শাড়ি আর হাতের চুড়ি,
পায়ে পায়েল আর আলতা,
কোমরে বিছা,
মাথায় খোপা করেছে তবুও চুল গুলো ছেড়ে রাখার মতো করেই রেখেছে,
কোনো এক দমকা বাতাসে তাঁর সামনের চুল গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে,
হাতে এক গাঁদা রজনীগন্ধা টেবিলে রেখে দিনের আলো কে আধার করে সে টেবিল ল্যাম্প টি জালিয়ে দিয়ে সে ল্যাম্প এর পাশে যেয়ে বসে রইলো।
দৃষ্টি স্থির করে সে কি যেনো আনমনা ভাবে ভেবে চলছে ।
টিপ টিপ করে প্রদীপ গুলো জ্বলেই চলেছে পাশে দিয়ে ।
হঠাৎ করে মনে পড়লো, কফি গরম করতে দিয়েছিলো, দৌড়ে গিয়ে কফি নিয়ে এসে বেল্কুনি তে গিয়ে দাঁড়ালো সে।
না, আজ আসলে নীলার কিছুই ভালো লাগছে না। কেমন যেনো এক ভালো না লাগা তে ভড় করে পুরো ভোর খানা সে কাটিয়ে দিয়েছিলো নির্ঘুম রাতের পর । সকালে ক্লাস করে এসে ঘুমাতেও ইচ্ছে করেনি। অদ্ভুত এক ক্লান্তিহীনতায় ভুগছে । বিকেল টাও আজ কেমন যেনো উদাস করা, নীল আকশে কালো মেঘ এর আশ্রয়য়হীন ভাবে ছুটে চলা দেখতে দেখতে আর নীড়ে ফেরা পাখিগুলোর ঝাক বেধে উড়ে বেড়ানো ক্ষন এ ডুবে যেতে যেতে তার হঠাৎ মনে পড়লো সে আজ ইচ্ছে করেই সেজেছে । নীল শাড়ি পড়েছে, কপালে টিপ দিয়েছে, ম্যাচিং করে চুড়ি পড়েছে, চোখে কাজল দিয়েছে, কানে দুল, পায়ে পায়েল কোনো কিছুই বাদ দেই নি। কিন্তু তাঁর এ মুহূর্তে আসলে পড়ে পড়ে ঘুম পারার কথা। আচ্ছা কি হয়েছে নীলার? ভাবছে সেই রাত থেকে কিন্তু বের করতে পারছে না। কেম্পাস থেকে ফেরার পথে রজনীগন্ধা কিনে এনেছে নিজে মালা বানিয়ে মাথার খোপা তে পড়বে বলে । এগুলো সবই তো প্রেমে পড়া কোনো মেয়ের প্রাথমিক লক্ষন হিসেবা ধরা যায় কিন্তু না, নীলার ক্ষেত্রে সেরকম কিছু তো হয় নি ।হঠাৎ করেই নীলা বুঝতে পারলো, নাহ! সে আর নিজেকে আজ ঘরে বন্দী করে রাখতে পারছেনা। কই যাবে? বাসার ছাঁদে? না সেখানে তো প্রতিদনই যায়,আজ ভালো লাগবে না। তাহলে?
পড়ন্ত বিকেল এখন, যদি ট্রেন লাইন টায় কারো হাত ধরে হাটা যেতো? সন্ধ্যা গড়িয়ে আসার কালে টঙ এর দোকানে এক চুমুক ধোঁয়া ওড়ানো চা। সে কখনো টঙ এর দোকানে চা খায় নি, তাঁর খুব ইচ্ছে। সন্ধ্যা নেমে আসার পড় হলুদ রড লাইটের নিচে ফাঁকা রাস্তাটায় সে তাঁর হাত ধরে ঘুরে বেড়াবে, দুজন মিলে ঐ যে দেখা যাচ্ছে দূরে ফ্লাই ওভার টা? ঐ ফ্লাই ওভার টার নিচে যেয়ে বসবে যেখানে ফ্লাই ওভার এর নিচে থেকে উপর দিয়ে যাওয়া গাড়ি গুলোর সাই সাই আওয়াজ শোনা যাবে। কানে সেগুলো অনেক টা সমুদ্রের পারের সমুদ্রের গর্জন এর মতো শোনা যায়। এমন সময় সে হয়তো তাকে দুটো আইসক্রিম দিয়ে বলবে 'এই নাও একটা তোমার একটা আমার" কিন্তু দুটই সে একাই খাবে। তারপর ? হুম, সে তো গান পারে, নীলা তাকে একটা গান গেতে বলবে...
(ফোনের শব্দে নীলার ভ্রম ভাংলো)
-হ্যালো
-নীলা?
-হুম
-বের হবা আজ কে?
-তুমি মনে রেখেছো ?
-কি?
-না , কিছুনা ।
-তাহলে?
-এমনি, কই যাবা?
-না, তোমাকে নিয়ে বের হতাম একটু।
-কোথায়?
-আচ্ছা, তুমি রেডি হও। আমি আসছি, আমার জাস্ট ৩০ মিনিট লাগবে। বাইক টা একটু ঠিক করাতে নিয়ে এসেছি তো। জাস্ট ৩০ মিনিট। তুমি রেডি হও ।
-আচ্ছা ।
ওপাশ থেকে অর্ণব ফোন রেখে দেয়। নীলা ভাবতে থাকে, কই নিয়ে যাবে অর্ণব?
এতোক্ষন যা ভাবছিলাম অর্ণব কি সেরকম কিছু কোনোদিন করবে? সে কি আমার মনের কথা বোঝে?
কাল রাতে তো একটাবার উইশো করেনি। হয়তো তার মনেই নেই আজ নীলার যে জন্মদিন। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলো , বা প্রয়োজন বোধ করেনি। তাই হয়তো আজ বাইরে নিয়ে যাবে।দুজন মিলে বা বন্ধুদের নিয়ে হয়তো আমার জন্মদিন পালন করা হবে। কোন সারপ্রাইজ দেয়া হবে। বা কিছুই হবে না। নীলার এসব আনমনা ভাবনার ভেতর হঠাৎ করেই অর্ণবের বাইকের হর্ন শুনতে পেলো নীলা, উকি দিয়ে দেখলো, হ্যাঁ, অর্ণবই চলে এসেছে। হুরমুর করে সব ভাবনা চিন্তা কে উড়িয়ে দিয়ে নীলা নেমে গেলো। অর্ণব এর বাইক এর পিছে যেয়ে বসলো এবং সে বাইক ছুটে চললো সব কল্পনা আর রূপকথার মালা আর জাল গুলো কে ছিরে দিয়ে। নীলা অর্ণব কে পিছ থেকে জড়িয়ে ধরলো এবং তারা দুজনেই ছুটতে থাকলো । নীলা নিজেও জানেনা অর্ণব তাকে কই নিয়ে যাচ্ছে বা সেই বা কোথায় যাচ্ছে। সে শুধু জানে আজ সে খুব সুন্দর করে সেজেছে এবং সে সাজ আজ তাঁর জন্মদিন বলে নয় বা অর্কেণবও দেখানোর জন্য নয়। তাহলে সে সাজ কার জন্য বা কেনো নীলা সে চিন্তাটাও এ মুহূর্তে করতে পারছে না।

(To be continue...)

নিলাদ্রি নীলাম্বরী
Aboyob Siddiquie Medi