সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬

স্বপ্ন পরীর কাছে লিখা খোলা চিঠি-৩

স্বপ্নপরী,
অনেকদিন হয় তোমায় লিখিনা, অনেকদিন মানে অনেক দিন। ভেবেছিলাম আর লিখবোও না। কিন্তু আজ বড্ড লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। অভিমান করে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারছিনা। ঠিক কতোদিন পর এভাবে তোমায় লিখছি তা আমার মনে নেই, কি লাভ বলো এসব আবেগের দুনিয়াতে বসবাস করে? যে মানুষটির কোনো অস্তিত্ব নেই তাকে নিজের মাঝে লালন-পালন করে এভাবে এসব লিখালিখিকে কেও পাগলের প্রলাপ বলে অপমান করলেও যে আমার কোনো উত্তর নেই দেবার। কিন্তু প্রতিটি মানুষের রিলিফের কিছু জায়গা থাকা উচিত যেখানে সে পুরোটাই নিজেকে খুজে পাবে, স্বাধীন এক মানুষ হিসেবে নিজের সত্ত্বাকে আকাশে মেলে ধরে উড়ে বেড়াতে পারবে। আমার জন্য জায়গাটা আসলে কাল্পনিক তুমি।
কেমন আছো তুমি? এতোদিনে বোধয় আমার উপরেও তোমার খুব উল্টো অভিমান জন্ম নিয়েছে তাইনা? হয়তো ভাবছো একটা মানুষ কিভাবে বেলুম তোমার অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে? আবার তোমায় চিঠি না লিখে এতোদিন থেকে গেলো, মনমতলবি লিখতে ইচ্ছে করলো আর এসে হাজির হলো, তাইনা? মনে করতেই পারো, তাতে আমার কোনো বাধা নেই। আমি বাধা দেয়ার দলের লোক নই। আজ আমি যেখান থেকে তোমায় চিঠি লিখছি তা বর্ণনা করতে গেলে বলতে হবে স্বর্গপার ! কিভাবে? বিশাল এক আকাশের নিচে কোনো এক মহা সাগরে ভাসমান ট্রলারে হারিকেনের আলোতে বসে বসে তোমায় লিখছি। ভাবতে পারো আমি এখানে এলুম কি করে? যার কল্পনার জগত নিয়ে এতো নাড়াচাড়া তাঁর জন্য এ কোনো অসম্ভব কিছু বলোতো? বাহিরে অনেক্ষন খুব বৃষ্টি হচ্ছে, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বিকট শব্দে। এটাকে আমি স্বর্গপার বললাম বলে তুমি একটু অবাক হচ্ছো,তাইনা? আমার জন্য ইহাই স্বর্গ এখন। ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য! মানুষ জাতি দমকা হাওয়ার মতো শুন্যতা পছন্দ করেনা তাই যখন যেখানে থাকে তাহাকেই তারা স্বর্গ বানিয়ে নেয় অথচ শুন্যতা তে ভড় করেই তাদের বসবাস। যেমন আমিও তুমিহীন এক শুন্যতায় ভড় করে কালের পর কাল পার করে যাচ্ছি। এখন এ শুন্যতা আমার এক দুঃখ বিলাসী অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাহ, এর নাম আমি দিলাম শুন্য বিলাসী। আমার জন্য গভীর রাতে এমন পরিবেশকেই স্বর্গ মনে হচ্ছে। এমন সময় তোমায় লিখার একটা কারন আছে, তুমি অনেকবার বারণ করেছো তবুও বলছি। পরী, আমার বয়স হয়েছে। অনেক দায়িত্ব- কর্তব্য নামক চাবুক আমার ঘাড়ে এসে পড়ছে। স্বপ্ন জগত বলো আর নিজের দেখা স্বপ্ন বলো সেখানে আমি আর বিচরন করিনা। গান-বাজনা করিনা, ওসব ফিল্ম-টিল্ম নিয়েও আর পড়ে থাকা সম্ভব হয়নি। তাই স্বপ্ন বা কল্প জগতে আমি অনেক আগেই মরে গেছি, সময় হয়েছে তোমায় জানিয়ে দেবার এই মহাসাগরে আমার তরীও হয়তো আজ ডুবে যেতে পারে। বরং সেটাই খুব স্বাভাবিক হবে, আমি বেচে গেলে সেটাই অস্বাভাবিক হবে। ট্রলার খানা কে আমার কিছু খুব কাছের মানুষ যারা অনেক্ষন ধরে এ মহাসাগরে বেয়ে আমায় নিয়ে যাচ্ছিলো তারা অনেক্ষন ধরে নিয়ন্ত্রনে রাখার চেস্টা করছে হয়তো তারাও একটা সময় আশা ছেড়ে দিবে আর তখনি হয়তো তা ডুবে যাবে। আর তুমি তো জানই আমি সাতার জানিনা। আচ্ছা, এসব কথা থাক। তোমায় বরং আমার কিছু আপডেট জানাই।
তোমার নরক বালক এখন গান করেনা, গল্প লেখেনা বা সে সব গল্পের স্ক্রিপ্ট সাজিয়ে ফিল্ম বানাতেও যায়না। হাতের কাছের যে ছোট ভাই ছিলো সেও অনেক দূরে চলে গেছে, আবার অন্যভাবে বললে সরিয়ে দিয়েছি। কেওই আর নেই সেভাবে, হাতে গোনা দু-একজন যা আছে তারা বা তাদের কতোটা কাছের আমি তা নিয়ে আমি সন্দিহান অনেক, সে অর্থে আমি খুব একা একজন মানুষ এখন। এ আর নতুন কি বলো? যার সুখ-দুখ তো দূরের কথা সিম্পল একটা কথা শেয়ার করার কোনো বান্দা-বান্দি নাই সে তো একাই তাঁর থেকে একা আর হতভাগা আর কে বলো? এখন আর কাওরো কথাও শুনি না, সেটাই ঝামেলার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের সুখদুঃখের ভ্যান-ভ্যানানি কে যেদিন থেকে "না" করেছি সেদিন থেকেই আমি আচানক ভাবে চেঞ্জ হয়ে গিয়েছি। খুব সুন্দর করে এখন না বলতে শিখে গেছি জানো? তবে তবুও ভালো আছি, ভালো থাকা শিখে গেছি বলতে পারো। জানো, জিমে জয়েন করেছি? এইতো ৩ মাস তিন সপ্তাহ চলছে, ১১ কেজি ডাওন, হাহ... কি ভাবছিলা? তোমার মোটু মোটুই থাকবে? সেদিন আর থাকবেনা। কিউট পান্ডা, বা পু বা যাই বলো ওসবের দিন শেষ। দেখবা আমি খুব শিগ্রি আগের আদনান সামি থেকে বর্তমান আদনান সামি হয়ে গেছি। মাস্টার্স এর ক্লাস হয় দু'দিন, দুইদিনে আমার গাধার মতো খাটনি যায়। অনার্সে বেশ ভালো করেছি। তোমার ইচ্ছে পূরণ করেছি সাথে বাবা-মাকেও খুশি করেছি। ও! তোমাকে তো বলা হয়নি আমি বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। মানে কোচিং করছি, দোয়া করো। একটা জব-টব এরও খুব চেস্টা চলছে। এইতো, এসবের মধ্যেই আছি। জানো আমিনা খুব চুপচাপ আর অমায়িক ধৈর্যশীল মানুষ হয়ে গেছি। আমার কেন যেন কিছুতেই কিছু হয়না, না রাগ না কোনো অনুভুতি। মাঝে মাঝে ভয় হয়, কিসের তা জানিনা। আমার ধারনা তুমি খুব বুঝে গিয়েছো যা তোমার বোঝার দরকার ছিলো,তাইনা? আমায় একবার এসে বুঝিয়ে যেয়ো প্লিজ। এভাবে লিখতে থাকলে লিখতেই থাকবো। তোমায় লিখতে গেলে আমার হাত থামতে চায়না, চাইবেওনা তবুও থামতে হবে,থামতে হয়। খুব ঘুম আসছে। না পীল খাইনি, এমনি খুব টায়ার্ড লাগছে। কস্ট হচ্ছে... থামতে হবে।
শোনো,
ঐ আকাশে ঝাপসা তারাটি সাক্ষী হয়ে আছে, প্রতিটি মুহূর্ত আর একাকিত্তের হিসেব আমার কাছে নেই কিন্তু ঐ তারার কাছে আছে, কখনো জানার ইচ্ছে হলে ডিপোজিট ভেঙ্গে সব হিসেব-কিতেব কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নিও। ওয়াদা করছি একটুও কমতি পাবেনা সেখানে তোমায় ভালবাসার আর দিনেক রাতেক তোমায় জঘন্ন ভাবে মিস করার। আফসোস পুরোটাই কল্পনাতেই রেখে দিতে হলো, শুধু তোমাকেই পাওয়া হলো না। এক তুমি কল্পনা ভেঙ্গে আসলেই না,আর এখন তো... আচ্ছা বাদ দেই। চার দেয়ালের বন্ধী হয়ে থাকা মানুষ কে সে দেয়াল ভেঙ্গে বের করা খুব কঠিন কাজ পরী, আমি জানিনা সে কাজ তোমার দারা সম্ভব হবে কিনা। আমি সে অপেক্ষাতেও নেই তবু দেয়ালে বন্ধী থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে চোখ মিলে তাকালে তাকাতে ইচ্ছে করে, চোখ মিলে পরাণ ভরে খুব আকাশ দেখতে ইচ্ছে করে, তোমার চুলের খোপায়, কানের দুলে, ঠোটের নিচে, গালেড় টোলে আর কাজলা চোখের নেশায় ধরা দিতে ইচ্ছে করে। নিজ হাতে আলতা রাঙ্গা এক পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে। হাতে হাত রেখে সব দেয়াল ভেঙ্গে বের হয়ে যেতে ইচ্ছে করে, তমার শাড়ীর আচলে, কোমড়ের বিছায় আর কোলে মাথা রেখে খুব ঘুমুতে ইচ্ছে করে। পারবে আমাকে এ দেয়াল ভেঙ্গে বের করতে? হাহাহা, আবার কল্প করলাম। জানি সত্য নয়, শুধু কল্পনায়, স্বপ্নের ঘুড়ি, আমরাই উড়াই।
সাগরের ঢেও খুব উত্তাল হয়ে উঠেছে, বাস্তবতার থাবাটাও বেশ লেগেছে, বেচে থাকলে আবার লিখবো। ভালো থেকো পরী। ডুব সাগরে ডুবলে তরী মাঝি খুজে পাওয়া দায় তবু তোমার লাগি ওগো পাষাণ করি এ মিনতি। পারলে মোরে তরী খুঁজে উঠাইয়ো তোমার ঘাটে, ভালবেসে আচল বিছায়ে পান্তা দিলেও খাবো মন ভড়ে, আপন করবো তোমায় নিজেরে বিলায়া দিয়ে।
-নরকবালক
একটা কবিতা লিখেছিলাম বছর এক আগে, দিয়ে গেলাম।
মেঘকন্যা
মেঘ ঘুর ঘুর ডাকছে বৃষ্টি কোথায় সাজছে? মেঘলা মেয়ে,মেঘলা বরণ কেশে তাহার মন হরণ
বৃষ্টি কাহন জবা কানন বৃষ্টি আজ আসবে তাই তো বাতাস বইছে কল্প যে সে আঁকছে
না বলা কেচ্ছা দেখো কতো বলছে বৃষ্টি বরণ? জবা কানন? মেঘ বিলাসী? মন উদাসী? বৃষ্টি কন্যা?
না না, মেঘপরী ঐ যে দেখো বৃষ্টি নামছে! উদাসী চোখে ঘোলাটে মনে নয়ন তারায় বৃষ্টি কন্যা কি যেনো ভাবছে
হ্যাঁ হ্যাঁ, বৃষ্টি দেখো আসছে বৃষ্টি বেলায় কন্যা আনমনা তবু সে তো বৃষ্টি পানে চাইছে ।
বৃষ্টি দেখো আসছে, মেঘপরীর দেশে,সে নয়নে মেঘলা বেশে সে যে নামবে । মেঘলা কন্যা, মেঘলা বেশে
বৃষ্টি বিলাশে আজ সাজবে তাহারে আজি সে যে বাঁধবে । স্বপ্ন পরীর কাছে লিখা খোলা চিঠি-৩ অবয়ব সিদ্দিকী মিডিয়া অক্টোবার ১১,২০১৬

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন